সিজারের পর ইনফেকশন হলে করণীয় কি আমরা কম-বেশি এই বিষয় জানতে চাই। কারণ বাংলাদেশে আমাদের যে পরিমাণ সিজারের মাধ্যমে সন্তান জন্ম নিচ্ছে যেটা বিশ্বের অন্য সব দেশের তুলনায় অধিক বেশি।
আর এই সিজারের সাথে সাথে নারীদের ইনফেকশনের ঝুঁকি অনেক বাড়ছে। তাই আজকে সিজারের পর ইনফেকশন হলে করনীয় কি এবং কেন হয় আরো বিভিন্ন বিষয় আজকে আলোচনা করব।
সিজারের পর ইনফেকশন হলে করণীয়।
বাংলাদেশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে যে, বাংলাদেশে প্রতি বছর 3.2 মিলিয়ন প্রসব হয় এই ৩.২ ডেলিভারির মধ্যে ৪২ শতাংশ 1. 3 মিলিয়নেরও শিশুই সিজার অপারেশনের মাধ্যমে ভূমিষ্ঠ হয়।
আর এই বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর অধিকাংশ মায়েরা সিজারের ইনফেকশনে আক্রান্ত হয়ে থাকে। আর এই ইনফেকশনের কারণে তাদের ব্যথা থেকে শুরু করে আরও বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে। তাই চলুন আমরা তাহলে জেনে নিই সিজারের পর ইনফেকশন হলে আমাদের কি কি করনীয় -
> বেশি ব্যথা ও ইনফেকশনের প্রথম কারণ হলো দেড় মাসের আগে রোগীর হাঁটাচলা ও সিঁড়িতে উঠানামা করার কারণে ব্যথা হয়ে থাকে। কারণ সিজারের এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে রোগীর সেলাইয়ের ক্ষতস্থান পুরোপুরি শুকায় না। যখন ওঠা নামা বেশি হাঁটাচলা অনিয়ম করে তখন সেই ভিতরের সেলাই তে প্রেসার পড়ে।
তখন ক্ষতস্থানে প্রেসার পরে। এই প্রেসার পড়ার ফলে সেখানে ঘা হয়। ভিতর থেকে ইনফেকশনটা শুরু হয়। তারপরে ইনফেকশন আস্তে আস্তে বাইরে চলে আসে। তখন হয়তো আমরা বুঝতে পারি। তাই তাই একজন সিজারিয়ান রোগীর অবশ্যই উচিত ওর এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কাজবাজ না করা।
> সিজারে ইনফেকশন ও ব্যথার আরেকটি কারণ হলো যেমন স্বামী স্ত্রী মিলনের করার কারণে হয়। কারণ সিজারের প্রেসক্রিপশনে ডাক্তাররা লেখে দিয়ে থাকেন। যে চার থেকে ছয় মাসের মধ্যে সহবাস করা যাবে না। কিন্তু এটা অনেকের ক্ষেত্রে মানা হয় না। তখন সিজারিয়ান মায়ের পেটে চাপ পড়ে এই কারণে অনেক ক্ষেত্রে ব্যথা হয়ে থাকে।
> সিজারের পর ইনফেকশন হওয়ার আরেকটি প্রধান কারণ হচ্ছে অনেক সিজারিয়ান রোগী সিজারের পর এন্টিবায়োটিকের যে কোর্স টি দেওয়া হয়। সেটি অনেকেই সম্পূর্ণ সঠিকভাবে কমপ্লিট করে না।
অনেকেই আছেন যখন দেখে তার ব্যথা আগের থেকে কম বা একটু শুকিয়ে গিয়েছে তখন সে তার ওষুধ নিয়মিত খাওয়া বন্ধ করে দেয়। তাই আমাদের একান্তই দরকার হল ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনে দেওয়া পুরো এন্টিবায়োটিকের কোর্স কমপ্লিট করা।
> হয়ে থাকে আরও কারণে অনেকেই আছে ক্ষতস্থান ঠিকমতো ড্রেসিং করে না। সিজারের মিনিমাম এক মাস এক ভাবে ড্রেসিং করা অবশ্যই একজন রোগীর নিয়ম। কারণ অনেক রোগী আছে এই ড্রেসিংর কাজটাকে অবহেলা করে থাকে।
আপনি যখন আপনার সিজার ক্ষতস্থানে বায়োডিন , এক্সোসোল, পটাসহ আরো বিভিন্ন মেডিসিন ধারা যখন ওয়াশ করেন তখন আপনার ওই জায়গাটা জীবন মুক্ত থাকে। আপনার ক্ষতস্থান যদি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না করেন তাহলে ওখানে জীবাণু আক্রান্ত হয়।
আর এই জীবাণু আক্রান্তের কারণেই সেলার ভিতর থেকে আস্তে আস্তে ইনফেকশন শুরু হয়। যে ইনফেকশনটি একপর্যায়ে শরীরের ভিতর থেকে বাইরে বেরিয়ে আসে ও পানির মত অথবা পুজোর মতো দেখা যায়। এজন্য আমাদের প্রত্যেক রোগেরই করণীয় মিনিমাম এক মাস প্রতিদিন দুইবার করে ক্ষত স্থানে ড্রেসিং করা।
> সিজারে ইনফেকশন হওয়ার আরেকটি কারণ হতে পারে। যে ডাক্তার সিজার করেছে। তার অপারেশনের যন্ত্রপাতি তে যদি কখনো কোন ধরনের ত্রুটি থেকে থাকে সে ক্ষেত্রেও অনেক সময় ইনফেকশন দেখা দিতে পারে।
> সিজারের পর সিজারিয়ান রোগীর প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খাওয়া একান্ত জরুরি। কারণ এই ভিটামিন সি যুক্ত খাবারের কারণে আপনার ঘা অতি দ্রুত শুকাতে পারে এবং ইনফেকশন কে টাকা দিতে পারে।
> অনেক রোগীর এলার্জি পরিমাণ যাদের বেশি তারা যদি যুক্ত খাবার খায় সিজারের পর। সে ক্ষেত্রেও সিজারিয়ান রোগীর ইনফেকশন হতে পারে। এর জন্য একজন সিজারিয়া মায়ের একান্ত উচিত এলার্জিযুক্ত খাবার মিনিমাম দুমাস না খাওয়া।
> আরেকটি কারণও হতে পারে ইনফেকশনের। যে কাজটি প্রায় সিজারিয়ান রোগীর ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। সিজারের পর ক্লিনিক অথবা হসপিটাল থেকে ফেরার সময় ডাক্তার অনেকে এক সপ্তা অনেক সময় 15 দিন পর ডাক্তারের সাথে দেখা করতে বলে।
কিন্তু অনেক রোগের ক্ষেত্রে এমনটা হয়ে থাকে যে সাত দিনের দিন বাসায় ফিরে আসার পর তারা আর ডাক্তারের শরণাপন্ন হন না। আপনের ইনফেকশনের বা আপনার সেলাই কতটা শুকিয়েছে বা সেখানে ইনফেকশন আক্রান্ত হয়েছে কিনা সেটা ১৫ দিন বা এক সপ্তাহ পর গেলে ডাক্তারের বুঝতে পারে। তখন যদি আমরা ডাক্তারের কাছে না যাই তখন ইনফেকশন যদি থেকেও থাকে অল্প পরিমাণে সেটা বুঝতে পারা যায় না
এর জন্য আমাদের প্রত্যেক রোগিরই অবশ্যই উচিত আবাসন থেকে আসার পর অবশ্যই ডাক্তার যে কয়দিন পর আপনাকে দেখা করতে বলে ঠিক সেই কয়দিন পর আছে অবশ্যই যাওয়া উচিত।
আশা করি উপরে যে বিষয়গুলো দেখানো হয়েছে এগুলো যদি একজন সিজারিয়ান মা মেনে চলেন আশা করি অবশ্যই ইনফেকশন থেকে আপনি রক্ষা পেতে পারেন।
সিজারের পর কি কি খাবার খাওয়া উচিত।
সিজারের পর একজন মায়ের কি কি খাবার খাওয়া উচিত সে বিষয়ে আলোচনা করা হলো-
সিজারের পর একজন মায়ের খাবার খেতে হবে সেগুলো হলো
১ ভিটামিন সি যুক্ত খাবার। যেমন-কমলা, মাল্টা, লেবু, বাতাবি লেবু, কারণ এইসব টক জাতীয় খাবারের প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি থেকে থাকে। খুবই দ্রুত শুকাতে সাহায্য করে।
কিন্তু আমাদের অনেকের ধারণা এইটা যে এই ধরনের টক জাতীয় খাবার খেলে হয়তো সেলাইয়ের স্থান ফুলে যাবে বা ঘা হবে। কিন্তু আমাদের এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। কারণ স্বাস্থ্যসংস্থান থেকেই বলা হয়েছে যে ভিটামিন সি যেকোনোই ঘা জাতীয় ও অপারেশন রোগীর ক্ষত শর্তে দ্রুত চেষ্টা করে
তাই একজন সিজারিয়ান মায়ের অবশ্যই উচিত প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খাওয়া।
২ সিজারিয়ান মায়ের ভাতের থেকে সবজি বেশি খাওয়া। কারণ সিজার অপারেশনের পরও রোগীর হাত-পা ফোলা সম্ভাবনা থেকে থাকে। তখন যদি রোগী প্রচুর পরিমাণে ভাত খেয়ে থাকে, তাহলে ওই ভাতের যে প্রোটিন আছে সেই প্রোটিন টা মায়ের জন্য তখন বেশিটা উপকারী না।
তখন যদি রোগী প্রচুর পরিমাণ ভাত খেয়ে থাকে তাহলে তার হাত পা পানি জমতে পারে ও ফুলে যেতে পারে। এর জন্য অবশ্যই রোগী রুচি ভাত বেশি পরিমাণে না খাওয়া সবুজ শাকসবজি বেশি করে খাওয়া।
৩ রোগের অবশ্যই সিজারের এক মাসের মধ্যে এলার্জিজনিত খাবার খাবে না। কারণ রোগীর যদি এলার্জি থেকে থাকে। অনেক সময় এমনও হয় যে একজন রোগী এলার্জিজনিত রোগে আক্রান্ত কিন্তু রোগী নিজেই জানে না।
এর জন্য প্রত্যেক সিজারিয়ান রোগীর অবশ্যই উচিত এলার্জিক যুক্ত খাবার থেকে এড়িয়ে চলা। এলার্জিযুক্ত খাবারগুলো হল যেমন-
যেসব খাবারে এলার্জি থেকে থাকে সেসব খাবার গুলো হলো। বেগুন, ঢেঁড়স, মসুর ডাল, পুঁইশাক, কচু, চিংড়ি , গরুর মাংস, হাঁসের মাংস, হাঁসের ডিম সহ আরো বিভিন্ন এলার্জিজনিত খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে।
৪ সিজারের পর রোগী যে মাছগুলো বেশি খাবে সেগুলো হলো। শোল মাছ, মাগুর মাছ, শিং মাছ, টাকি মাছ, ও গুঁড়া মাছ। কারণ এইসব মাছে যদি রোগীর হিমোগ্লোবিনের অভাব রক্তশূন্যতা যদি থেকে থাকে তাহলে এই মাছ পূরণ করতে চেষ্টা করে।
৫ একজন সিজার রোগীর প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। কারণ পানি পান করার মাধ্যমে তার শরীরে পানি শূন্যতার ঘাটতি পূরণ হবে।
সিজারের পর করনীয়।
সিজারে পরে রোগীর করণীয় হচ্ছে-নিয়মিত বেল্ট বাধা, উঠানামা ওর ভারী কাজ কম করা, নিয়মিত ড্রেসিং করা এন্টিবেটিকের কোর্স সম্পূর্ণ করা, এলার্জিযুক্ত খাবার থেকে সব সময় দূরে থাকা, নিয়মিত ক্ষতস্থানে ড্রেসিং করা ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হাজবেন্ড ওয়াইফের সহবাস না করা, ও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খাওয়া।
এ নিয়ম গুলো যদি একজন সিজারিয়ান মা ও রোগী মেনে চলে তাহলে অবশ্যই সে ঝুঁকিমুক্ত থাকবে।
সিজারের পর তলপেটে ব্যথা।
সিজারের পর তল পেটব্যথা হওয়ার কারণ হলো। নিয়মিত বেল্ট ব্যবহার না করা সিঁড়িতে উঠানামা করা ও ক্ষতস্থানে যদি প্রেসার পড়ে তাহলে সিজার পর তলপটে ব্যথা হয়ে থাকে।
সিজারের পর সহবাসের নিয়ম।
সিজারের পর ডাক্তারের নিয়ম অনুসারে সহবাস করা।মিনিমাম তিন থেকে চার মাসের মধ্যে সহবাস না করা। কারণেই নিয়ম মেনে না চললে রোগীর ক্ষতস্থানে চাপ পড়ে আর সে কারণে রোগীর সমস্যা দেখা দিতে পারে।
সিজারের পর বেল্ট ব্যবহার।
সিজারের পর একটা রোগীর বেল্ট ব্যবহার অবশ্যই প্রয়োজন। ডাক্তারের মতে একজন অপারেশনের রোগীর সিজারের তিনদিন পর থেকে ছয় মাস পর্যন্ত নিয়মিত বেল্ট ব্যবহার করতে হবে।
সিজারের পর পেটের দাগ কমানোর উপায়।
আমরা অনেকেই সিজারের পর পেটে দাগ পড়া নিয়ে এ বিষয় নিয়ে ভেবে থাকি। তাই যাদের সিজারের পর পেটে দাগ করে। অলিভ অয়েল ও ভেসলিন একসাথে মিক্স করে প্রতিদিন দুবার আলতো ভাবে মাসাচ করতে পারে। তাতে কিছুটা সম্ভাবনা আছে আপনার দাঁত কমে যাওয়ার।
সিজারের পর ডায়েট।
পর একজন রোগী ডায়েট করা উচিত। তবে সিজারের ২-৩ মাস পর থেকে একজন রোগী ডায়েট করতে পারবে।
সিজারের পর মায়ের যত্ন।
সিজারের পর একজন মায়ের অবশ্যই নিজের যত্ন নিতে হবে। নিয়মিত খাওয়া গোসল করা ও ঘুমানো একজন মায়ের অবশ্যই দরকার। তবে এই মায়ের যত্ন শুধু মা নিজে একা না। পরিবারের সবাইকেই একজন মায়ের যত্ন নিতে হবে। কারণ একজন মা সে যেমন সন্তানের যত নিতে ব্যস্ত থাকে তখন নিজের যত্ন নেওয়াটা হয় না। তাই আমাদের পরিবারের সবার দরকার যে একজন মায়ের যত্ন নেওয়া
প্রিয় পাঠক আমরা আজকে সিজারের পর ইনফেকশন সহ ও মায়ের কি কি করনীয় এইসব বিষয় যে বিস্তারিত আলোচনা করেছি আশা করি আপনারা সবাই বুঝতে পেরেছেন।
আমি যে বিষয়গুলো আলোচনা করেছি একজন সিজারিয়ান রোগী যদি এইসব নিয়ম মেনে চলে তাহলে অবশ্যই সে সুস্থ থাকতে পারবে ধন্যবাদ।