প্রাইমারি অটিজমের লক্ষণ ও প্রতিকার।

 প্রাইমারি অটিজমের লক্ষণ ও প্রতিকার। 

প্রাইমারি অটিজমের লক্ষণ ও প্রতিকার এই বিষয়ে আমাদের সবারই জানা উচিত। অটিজাম মূলত হল অটিজম স্পেকট্রাম  ডিসঅর্ডার  বা  এ এ সোডি এটি এমন এক ধরনের জটিলতম অবস্থা যাতে কথা বলতে, আচরণের ক্ষেত্রে যোগাযোগ করতে, এরকম অনেক সমস্যা দেখা দেয়। 

একজন অটিজম আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে শব্দ, অঙ্গভঙ্গি, মুখের এক্সপ্রেশন, ও স্পর্শ অথবা ছোয়ার মাধ্যমে নিজের ভাব প্রকাশ করা তার পক্ষে খুব কঠিন। তাই আজকে আমরা প্রাইমারি অটিজমের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্বন্ধে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করব।

অটিজমের লক্ষণ,প্রাইমারি অটিজমের লক্ষণ ও প্রতিকার,অটিজম কি,অটিজম,অটিজমের কারণ ও প্রতিকারের উপায় জেনে নিন,অটিজম এর লক্ষন ও প্রতিরোধে করনীয়,অটিজমের লক্ষণ কি,অটিজমের চিকিৎসা,অটিজম কি? কেন হয় ? লক্ষন ও প্রতিরোধে করনীয়,অটিজম থেরাপি,অটিজমের লক্ষন,অটিজম এর লক্ষণ,বন্ধ্যাত্বের কারণ ও প্রতিকার,অটিজম কেন হয় এবং প্রতিকার,অটিজম চিকিৎসা ও প্রতিরোধ,অটিজম এর চিকিৎসা,সেরিব্রাল পালসি ও অটিজমের,অটিজম কাকে বলে ও এর লক্ষণসমুহ,বিভিন্ন রোগের কারন ও প্রতিকার,অটিজম এর লক্ষন

প্রাইমারি অটিজমের লক্ষণ ও প্রতিকার। 

প্রাইমারি অটিজমের লক্ষণ ও প্রতিকার বিষয় নিম্নে সুন্দরভাবে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

অটিজাম রোগের বিষয়ে চিকিৎসকদের মতবাদ হল, শিশুদের বৃদ্ধির একাধিক স্তর থাকে দৈহিক বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক ও মানসিক বৃদ্ধ এমন একটি স্তর। শিশু যখন খুব ছোট থাকে তখন একটি শিশু, তার মাকে দেখে হাসে, তার আশেপাশের কেউ যদি কিছু করে সে আচরণ বিধিগুলো সে নিজের মধ্যে ধারণ করে, ও তার হাত পাও চলাচল আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পায়, তার মানসিক বুদ্ধিমতাও বৃদ্ধি পায়। 

কিন্তু একজন অটিজম শিশু সে এইসব অনুকরণ করা থেকে অনেক দূরত্ব থাকে। সাধারণ আর দশটা বাচ্চাদের এভাবে ও যে বয়সে তাদের শারীরিক বৃদ্ধি মানসিক বৃদ্ধি শ্রবণশক্তি, নাক মুখের ভঙ্গিমা পরিবর্তন হয় সেটা অটিজাম শিশুদের ক্ষেত্রে হয় না। 

চলুন জেনে নি ন কিভাবে বুঝবেন যে আপনার বাচ্চা অটিজম কিনা। 

শিশুর বয়স একটু একটু বাড়ার সাথে সাথে তার ভিতরে অনেক পরিবর্তন আসবে। যখন দেখবেন আপনার শিশু তার সাথে সমবয়সী বাচ্চারা উঠে বসে কিন্তু সে তার মাথা দাড়া   করতে পারছে না বা সে একভাবেই চিত হয়ে শুয়ে থাকে।  তাহলে এই বিষয়টাকে অবশ্যই গুরুত্ব দিবেন। 

একজন অটিজম বাচ্চা ও শিশু আপনার চোখে চোখ রেখে কথা বলবে না। আপনি যদি তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেন বা তাকে আপনার দিক কোন শব্দ করে তাকাতে বলেন, তখন যদি দেখেন সে আপনার দিক তাকাচ্ছে না ও আপনার শব্দগুলোতে ইন্টারেস্ট হচ্ছে না তাহলে বুঝবেন যে আপনার বাচ্চা অটিজম রোগে আক্রান্ত হতে পারে। কারণ অটিজাম শিশুদের রোগীদের আইকন্ট্রাক থাকবে না। 

অনেক শিশুর ক্ষেত্রে দেখা যায় যে তার কথা বলার পরিপূর্ণ বয়স ওভার হয়ে গেছে কিন্তু শিশু কথা বলায় জরতা আছে। বা সে একেবারেই কথা বলতে চায় না ও কথা বলে না। আবার এমনও দেখা যায় যে অনেক শিশু আছে কথা বলতে পারে কিন্তু সে কথা বলায় আগ্রহ প্রকাশ নেই। তাহলে বুঝবেন আপনার শিশু অটিজম হতে পারে। 

অটিজম শিশুদের ধৈর্য কম থাকে। এমনকি শিশুকে যদি একটা খেলনা দিয়ে খেলতে দেন কিছুক্ষণ পর যদি দেখেন সে খেলনাটা নিয়ে খেলার মত ধৈর্য তার নেই। বা ওই খেলাটা তার কাছে খুবই বিরক্ত লাগছে, এক মিনিটের ও কম সময়ও সে খেলনা নিয়ে খেলতে চায় না তাহলে বুঝবেন এগুলো অটিজমের প্রাইমারি লেবেল। 

অটিজম শিশুর মধ্যে সামাজিক আচরণগুলো থাকবে না। যদি দেখেন সামাজিকভাবে যেসব আচরণ গুলো শিশুদের শেখানো হয়, সে শেখানোর প্রতি তার কোন আগ্রহ নেই ও সে সামাজিক আচরণের প্রতি চরম থাকে। আবার যদি দেখেন যে পরিবারের ছোট বড় ও ঘরে ও বাইরের কার সাথে কিরকম আচরণ করা লাগে সেটিও যদি সে না বোঝে তাহলে বুঝবেন সে   অটিজম। 

যদি আপনি দেখেন এক জায়গায় অনেক বাচ্চারা মিলে খেলা করছে। কিন্তু আপনার বাচ্চার তাদের সাথে খেলার মত কোন আগ্রহ নেই, বা এই খেলাধুলা তার কাছে তেমন একটা ভালো লাগে না, সে যদি নিজেকে একা রাখতেই বেশি পছন্দ করে তাহলে অবশ্যই আপনি আপনার বাচ্চার এই বিষয়গুলো খেয়াল করবেন। কারণ এটি হচ্ছে অটিজমের প্রধান লক্ষণ। 

আপনি যদি দেখেন আপনার বাচ্চার বা শিশুর  ঘাড়  কোন একদিকে বাঁকা ও আর দশটা স্বাভাবিক বাচ্চার মত তার ঘাড় ও মাথা নাড়াচাড়া করতে পারছে না। সে একভাবেই মাথা রাখতে পছন্দ করে ও তার মুখের কোন এক অংশ থেকে লালা অথবা ছাপের মত বের হয়। এটা যদি তার ভিতরে সব সময় থেকে থাকে।  তাহলে বুঝবেন আপনার বাচ্চা অটিজম রোগে আক্রান্ত। 

 অটিজম কি?

অটিজম একটা জন্মগত ব্যাপার। শিশুর বয়স একটু একটু বাড়ার সাথে সাথে প্রকাশ পেতে থাকে তার এই অটিজমের লক্ষণগুলো। অটিজম এই শব্দটি বলতে অনেককে মানসিক রোগ বুঝলেও এটি কিন্তু মূলত এক ধরনের স্নায়বিকাশ জনিত সমস্যা। আমি আবার বলছি মানসিক রোগ ও অটিজাম কিন্তু এক না। বিশেষজ্ঞের এক গবেষণামতে প্রকাশ পেয়েছে যে সাধারণত মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা এইসব রোগে আক্রান্ত হয় একটু বেশি। 

অটিজম আক্রান্তদের অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ ও সামাজিক সম্পর্ক তৈরি করতে পারেনা। চিকিৎসকদের মতে শিশুদের এক থেকে তিন বছর বয়সের মধ্যে অটিজমের লক্ষণ গুলো দেখা যায়। আরো অনেক অটিজম বিশেষজ্ঞদের মতে,, শব্দজাত অবস্থা থেকে এই সমস্যা শুরু হতে পারে। আমেরিকান একাডেমি অফ পেরিয়া ট্রিকস ১৬ থেকে ২৪ মাস বয়সী শিশুদের বিশেষ কিছু পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়ে থাকে। 

এই পরীক্ষা ঘরেই মা-বাবা করতে পারেন। family ও পরিবারের ও মা বাবা মিলেই এই পরীক্ষা করতে পারে। যদি অটিজম কি এক কথা আমি বলতে যাই তাহলে বলব যে। সাধারণ আর দশটা বাচ্চার থেকে আপনার বাচ্চাকে যখন অস্বাভাবিক আচরণ করতে দেখবেন। তাহলেই বুঝবেন যে আপনার বাচ্চা স্বাভাবিক না। তখন আপনার ধরে নিতে হবে যে আপনার শিশু হয়তো অটিজম রোগে আক্রান্ত হতে যাচ্ছে। তাই এরকম সিমটম দেখার সাথে সাথেই অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। 

অটিজমের কারণ ও প্রতিকারের উপায় জেনে নিন।

অটিজমের কারণ ও প্রতিকারের বিষয় আলোচনা করা হলো-

অটিজমের কারণ- 
অটিজম হলো একটি মানসিক বিকাশ জনিত সমস্যা, তবে অটিজম কেন হয় সে বিষয়ে আসলেই এখনো পরিষ্কারভাবে গবেষকদেরও বিশেষজ্ঞদের মতে জানা সম্ভব হয়নি। তবে গবেষকদের মতে ধারণা করা হয়েছে যে, কিছু জেনেটিক এবং পরিবেশগত কারণে অটিজম দেখা দিতে পারে।

সেগুলো হতে পারে একজন মায়ের  গর্ব অবস্থায় অ্যালকোহল বা মৃগী রোগের আক্রান্তের ওষুধ দীর্ঘদিন সেবন করলে, গর্ব অবস্থায় একজন মায়ের যদি ডায়াবেটিস রোগ বা রুবেলায় আক্রান্ত হয় সেক্ষেত্রেও শিশু অটিজম রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তবে মেয়ে শিশুর থেকে ছেলে শিশুর অটোমের আক্রান্ত হওয়ার হার প্রায় চার গুণ বেশি। যদি একজন নারী বেশি বয়সে সন্তান নেন সে ক্ষেত্রেও সেই শিশুর অটিজম হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

 তবে আরেকটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে সাধারণ পরিবারের থেকে। উচ্চবিত্ত,, শহরে ধনী ও শিক্ষিত পরিবারের সন্তানরাই বেশি অটে যাবে আক্রান্ত হয়। বাকি সাধারণ ফ্যামিলির অটিজমের থেকে এইসব উচ্চবিত্ত ফ্যামিলির শিশুদের অটিজম আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যায় তুলনামূলক অনেক বেশি। 

অটিজাম প্রতিকারের উপায়-

একটি শিশুর মাঝে যদি অটিজমের প্রাথমিক সমস্যাগুলো দেখে থাকেন তাহলে অতি দ্রুতই চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। যদি প্রাথমিক অবস্থাই আপনার শিশুর অটিজমের চিকিৎসা নেয়া হয় তাহলে অটিজমের জটিলতা থেকে আপনার শিশুকে এড়ানো কিছুটা হলেও সম্ভব। 

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে যোগাযোগ ও আচরণগত থেরাপি, এপ্লাইড , এনালাইসিস, অকুপেশনাল থেরাপি, সেন্সরী ইন্টিগ্রেশন থেরাপি এসব প্রভৃতির মাধ্যমে অটিজমের শিশুদের জটিলতা চিকিৎসা করা সম্ভব। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটি তে এখন অটিজম আক্রান্ত শিশুদেরকে খুবই ভালো উন্নত মানের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। 

তবে সর্বোপরি কথা হচ্ছে শিশুর অটিজম যদি প্রাথমিক অবস্থাই ধরা পড়ে , ও তার সাথে সাথে চিকিৎসা ও থ্রাফি গুলো দেওয়া হয়। তাহলে এর প্রতিকার করা সম্ভব। আর সবচেয়ে প্রধান বিষয় হচ্ছে পরিবার মা বাবা সকলকেই একটি শিশু কে সময় দেওয়া।

অটিজমের প্রাথমিক লক্ষণ। 

অটিজমের প্রাথমিক লক্ষণগুলো হলো। আপনার শিশু হাসেনা, ব্যথা পেলেও সে কাঁদে না , তার হাত থেকে একটা জিনিস কেড়ে নিলেও সে রেগে ওঠে না, চোখে চোখ রেখে কোন অঙ্গভঙ্গি করে না, একা একা থাকতে পছন্দ করে, তার বয়স অনুসারে তার বিকাশ বাড়ে না এরকম বিভিন্ন প্রভৃতি দেখা দিলেই বুঝে নেবেন এগুলো অটিজমের প্রাথমিক লক্ষণ। 

সাধারণ শিশুরা তিন মাস বয়স থেকেই অনেক ধরনের মুখ থেকে শব্দ বের করে অঙ্গভঙ্গিমা করে এরকম আস্তে আস্তে সে হামাগুড়ি দিতে থাকে ও মানসিক বিকাশ ও সামাজিক বিকাশ সম্বন্ধে বোঝে।এর কোনটি যখন আপনার শিশুর মাঝে আপনি দেখবেন না তখন বুঝে নিবেন যে আপনার শিশুটি অটিজম রোগে আক্রান্ত হয়েছে। আর অটিজম রোগের প্রাথমিক লক্ষণ গুলো দেখার সাথে সাথেই অতি দ্রুতই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন। কারণ দ্রুত চিকিৎসার মাধ্যমে অটিজম থেকে ও অটিজমের ঝুঁকি থেকে শিশুকে রক্ষা করা সম্ভব। 

প্রিয় পাঠক আশা করি প্রাইমারি অটিজমের লক্ষণ ও প্রতিকার বিষয় সহ আরো অনেক বিষয় আপনাদেরকে জানাতে পেরেছি। তবে সর্বোপরি আমি একটা কথাই বলবো যে একজন অটিজম রোগীর কাছে সব থেকে প্রধান ওষুধ হচ্ছে তার পরিবার। পরিবারের সবার আচার-আচরণ ও ব্যবহারই হচ্ছে তার গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা। তাই আসুন আমরা সবাই অটিজম শিশুদের পাশে দাঁড়াই তাদের সুখ দুঃখ ভাগ করে নেই। 
Next Post Previous Post