দৈনিক যতটুকু ক্যালরি খরচ হওয়া উচিত

দৈনিক যতটুকু ক্যালরি খরচ হওয়া উচিত ,শরীর থেকে ক্যালরি ঝরানোর আগে আপনাকে জানতে হবে যে আমি শরীরটাকে কোন পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই। অর্থাৎ আমার শরীরকে কেমন দেখতে চাই এবং সেই অনুযায়ী আপনাকে পরিশ্রম ও ব্যায়াম করতে হবে। যাতে আপনার শরীর থেকে অতিরিক্ত ক্যালরি ঝরে যায়। তাই আমাদের এ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে নতুবা কোন কিছু অর্জন করা সম্ভব নয়।

তবে শরীরের ক্যালরির হিসাবটা হিসাবটা দুইভাবে করা হয়ে থাকে যদি আপনি শরীরের ওজন কমাতে চান তাহলে ক্যালরি ঝরানোর নিয়মটা একরকম আবার যদি বাড়াতে চান তাহলে ক্যালরির মাত্রা আবার অন্যরকম গ্রহণ করতে হবে।

দৈনিক যতটুকু ক্যালরি খরচ হওয়া উচিত


শুধু ক্যালোরি গ্রহণ করবেন এবং জানাবেন এটা মুখে বললেই হবে না। কারণ একটা হিসাব  আরেকটার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আপনি কতটুকু ক্যালোরি ঝড়াবেন কতটুকু গ্রহণ  করবেন সে হিসাবটাও জড়িয়ে রয়েছে।

যদি আপনি শরীরের ওজন কমাতে চান তাহলে তাহলে যতটুকু ক্যালরি আপনি গ্রহণ করছেন তার চেয়ে বেশি আপনাকে ঝরাতে হবে নতুবা এর  বিপরীতটি  ঘটবে, আর্থাত ওজন বেড়ে যাবে।

তবে কথাগুলো বলা খুবই সহজ কাজটা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে শুধু খরচের হিসাব গ্রহণের হিসাব করেই ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয় এর জন্য আপনাকে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে যে আপনি কি খাচ্ছেন কতটুকু খাচ্ছেন এই খাবারে কতটুকু পুষ্টি আছে খাবারের মান কেমন এমন সমস্ত বিষয়ে আপনাকে হিসাব রাখতে হবে এছাড়াও  শারীরিক ও মানসিক কিছু অভ্যাস যেমন ঘুমের অভ্যাস মানবিক চাপ হরমোন শারীরিক পরিশ্রম ইত্যাদির প্রভাব এখানে পড়ে।

পুষ্টিবিদদের ভাষায় বলতে গেলে বলা যায় প্রতিটি মানুষের বিপাক প্রক্রিয়ার ধরন  ভিন্নতা হয়ে থাকে। মানে একেকজনের হজম শক্তি এক এক ধরনের এবং তাদের খাদ্য ডাইজেস্টের প্রক্রিয়ায় একেক ধরনের। কেউ বেশি খেয়ে দ্রুত হজম করতে পারে আবার কেউ ঠিক ভাই একই সময় হজম করতে সক্ষম হয়।

ডাক্তারি ভাষায়  ‘বেসাল মেটাবলিক রেট (বিএমআর) বলতে পারি। আর এই (বিএমআর) থেকে জানা যায় যে একজন মানুষের প্রতিদিন কতটুকু ক্যালরি গ্রহণ করা উচিত।”
আমরা দৈনন্দিন যে কাজ করি এবং তার জন্য যে যে ক্যালরির প্রয়োজন হয় তা হিসাব করার পদ্ধতি হলো ‘হ্যারিস-বেনেডিক্ট ফর্মুলা’। এটাতেই আমরা হিসাব করতে পারি

এই হিসাবটি নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আমরা আগে নারীদের হিসাবটি করে দেখব।

অঙ্কের হিসাবে দৈনিক ক্যালরি খরচের পরিমাণ সহজেই বের করা যায়।

একজন নারীর ‘বিএমআর’য়ের মাত্রা বের করার সূত্র: নিয়ে আলোচনা করা হলো:-

৬৫৫+(৪.৩৫ x পাউন্ডে শারীরিক ওজন)+(৪.৭ x ইঞ্চিতে উচ্চতা) – (৪.৭ x বয়স)।

এবার পুরুষের হিসাবটা করে দেখা যাক পুরুষের জন্য সুত্র:

৬৬ + (৬.২ x পাউন্ডে শারীরিক ওজন) + (১২.৭ x ইঞ্চিতে উচ্চতা) – (৬.৮ x বয়স)।

“একজন ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতা, ৪০ বছর বয়স আর ১৬০ পাউন্ড ওজনের নারী এই সূত্র অনুযায়ী তার ‘বিএমআর’য়ের মান হয় ১৪৮৩।”

পরিশ্রমের বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করা যাক:

একজন মানুষ যদি তার ওজন না বাড়িয়ে শুধুমাত্র একই স্থানে ধরে রাখতে চায়। তাহলে তার শারীরিক পরিশ্রমের মাত্রা হিসাব করে বের করতে হবে।

সেই হিসাবটা করার ক্ষেত্রে  যারা মোটেই ব্যায়াম করেন না বা মাঝেমধ্যে খুব কম ব্যায়াম করেন তাদের বি এম আর এর মাত্রা ১. ২ দিয়ে গুন করতে হবে।

আবার যারা দেখা যায় সপ্তাহে কমপক্ষে এক থেকে তিন দিন ব্যায়াম করেন তাদের বি এম আর ১. ৩৭৫ দিয়ে গুন করতে হয়

আবার যারা মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম করেন সপ্তাহে তিন থেকে পাঁচ দিন তাদের বি এম আর ১.৫ দিয়ে গুন করতে হয়

আবার দেখা যায় যারা পুরো সপ্তাহ ধরেই বাড়ি ব্যায়াম করেন তাদের বি এম আর ১.৭২৫ দিয়ে গুন করতে হয়।

আবার দেখা যায় যারা বডি বিল্ডিং এর কাজ করেন অর্থাৎ প্রতিদিন দুইবার বাড়ি ব্যায়াম করেন তাদের বি এম আর এর সঙ্গে সর্বক্ষণ 1.9 দ্বিগুণ করতে হয়

এখন ধরা যাক  উপরে যে নারীর উদাহরণ আমরা দেখেছি , সে যদি প্রতি সপ্তাহে খুব কম ব্যায়াম করেন তবে এই হিসাব অনুযায়ী তার ‘বিএমআর’কে ১.৩৭৫ দিয়ে গুন দিতে হবে এবং এর  ফলাফল দাঁড়াবে ২০৩৯।

অর্থাৎ তার শরীরের পূর্বের ওজন ধরে রাখার জন্য এই পরিমাণ ক্যালরি তাকে প্রতিদিন গ্রহণ করতে হবে।

ক্যালরি ঘাটতির সঠিক মাত্রা

আমরা সাধারণত অনেকেই শরীরের ও ওজন কমানোর জন্য অনেক রকম পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকি।  যেমন খাওয়া-দাওয়া কমিয়ে দেই, ব্যায়াম করি আরো অনেক কিছু। কিন্তু আমাদের একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে যে, আমাদের যদি ওজন কমাতে হয় তাহলে আমাদের শরীরে ক্যালরির  ঘাটতি তৈরি করতে হবে অর্থাৎ আপনার খাওয়ার তালিকায় যতটুকু ক্যালোরি গ্রহণ করছেন তার থেকে বেশি খরচ করতে হবে।  যতদিন পর্যন্ত আপনি লক্ষ্যে না পৌঁছাচ্ছেন ততদিন পর্যন্ত এ পদ্ধতি চালু রাখতে হবে।


দৈনিক যতটুকু ক্যালরি খরচ হওয়া উচিত



তবে একটা জিনিস খেয়াল রাখতে হবে যে প্রথম অবস্থায় আমাদের ১৫ থেকে বিশ শতাংশ ঘাটতি বজায় রাখাই আমাদের উচিত।

আমরা যদি সেই 40 বছর বয়সে নারীর উদাহরণটা দিয়ে দেখি। তবে এটা দাঁড়াই যে বিশ শতাংশ ক্যালরি ঘাটতি মানে প্রায় ৪০০ ক্যালোরি অর্থাৎ প্রতিদিন ১৬০০ ক্যালরি খরচ করতে হবে।

অর্থাৎ সহজ কথায় বললে আমরা বুঝি শরীরের ওজন কমানো মানে আমরা দৈনিক যে পরিমাণ ক্যালরি গ্রহণ করি তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, অথবা শরীর চর্চা বৃদ্ধি করা অথবা দুটোর মিশ্রণে ঘটাতে হতে পারে।

শরীরের প্রয়োজন বোঝা

আমরা প্রায়ই দেখি মানুষ ওজন কম কমাতে গিয়ে অধিকাংশ মানুষ ব্যর ব্যর্থ হয়। তারা খাদ্য তালিকার ক্যালোরি কম মাত্রায় গ্রহণ অথবা অতিরিক্ত পরিশ্রম করেও আশা অনুর ফল পাচ্ছে না। তাহলে তাদের সমস্যা কোথায়? সমস্যা একটাই সেটা হচ্ছে তারা শুরুতেই ক্যালরির হিসাব সঠিকভাবে না জানায়।

শরীরের ক্যালরি হিসাব বের করা খুবই কঠিন। কারণ এটি একটি ধারণা মাত্র। তবে শুরুর হিসাবটা রাখাই ভালো পরবর্তীতে এটা পরিবর্তন করা যেতে পারে।

আমরা অনেক সময় লক্ষ্য করি অনেকেই হুট করে খাওয়া দাওয়া একেবারে কমিয়ে দেয়। এতে করে শুরুতে ফলাফলটা খুব ভালো পাওয়া যায়। কিন্তু পরবর্তীতে একই গতিতে আবার পূর্বের জায়গায় ফিরে আসে। কারণ হঠাৎ করে খাওয়া-দাওয়া কমে দেওয়ার ফলে মানুষের এতটাই ক্লান্ত অনুভূতি হয় যে পরবর্তীতে সব কিছু ছেড়ে দিতে মন চায়। তাই হুট করে খাওয়া দাওয়া কম না করে ধীরে ধীরে করা উচিত।

আপনি কতটুকু ক্যালরি গ্রহণ করলেন এবং কতটুকু খরচ হলো এই হিসাবটা প্রথমদিকেই ভালো হলেও  দূরযাত্রায় এই হিসাবটা নজর রাখা খুবই কঠিন। তাই আমাদের কতটুকু ক্যালরি গেল আর এল এদিকে নজর না দিয়ে আমাদের নজর দিতে হবে শরীরের প্রতি। শরীর কতটুকু পাতলা হল আমাদের  ব্যবহারকৃত পুরাতন জামাকাপড় শরীরে ঢিলেঢালা হয়ে যাচ্ছে কিনা। কাজের প্রতি বেশি মাত্রায় উদ্দাম বাড়ছে কিনা? ঘুম ভালো হচ্ছে কিনা? মনোযোগ বাড়ছে কিনা? এসব দিকে নজর দেওয়াই উচিত। যদি সবকিছু ঠিকঠাক ভাবে থাকে তাহলে প্রথমে যদি আমরা 10 শতাংশ কমিয়ে থাকি এটা ধীরে ধীরে আরো কমাতে হবে। তবে এই দীর্ঘ যাত্রায় আপনি  টিকে থাকতে পারবে নতুবা আপনি সফল হতে পারবেন না।

সবশেষে

আশা করি আমাদের লেখাটি আপনাদের উপকারে এসেছে। যদি উপকারে এসে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের সাথে থাকবেন। আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করবেন এবং নিয়মিত আমাদের লেখা আর্টিকেলগুলো মনোযোগ সহকারে পড়বেন। তাতে অবশ্যই আপনাদের উপকার হবে আশা রাখি।

আর্টিকেলটি আপনাদের কেমন লাগলো কমেন্ট এর মাধ্যমে অবশ্যই জানাবেন এবং এই আর্টিকেল সম্পর্কে যদি আপনাদের কোন মতামত থাকে তাহলে জানাতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ।

Next Post Previous Post