ভরা পেটে ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল

ডায়াবেটিস কি?

ভরা পেটে ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল মানবশরীরে এক ধরনের হরমোন থাকে যার নাম ইনসুলিন (যা শর্করা নিয়ন্ত্রনে রাখে)। ঠিক যখন থেকে আপনার শরীর প্রাকৃতিকভাবে এই ইনসুলিন উৎপন্ন করা বন্ধ করে দিবে অথবা সঠিক ভাবে কাজ করবে না তখনই বুঝতে হবে আপনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।


ভরা পেটে ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল


ভরা পেটে ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল

ডায়াবেটিস কত প্রকার?

ডায়াবেটিস প্রধানত দুই প্রকারঃ

১। টাইপ-১

২। টাইপ-২

টাইপ-১ঃ টাইপ ১ খুব একটা দেখা যায়না। যাদের টাইপ-১ ডায়াবেটিস হয় তাদের দেহে প্রাকৃতিকভাবেই ইন্সুলিনের ঘাটতি থাকে। যার ফলে তারা ইন্সুলিনের উপর পুরোপুরি নিরভরশীল। আপনি জানলে অবাক হবেন যে, ২০১৭ এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী গোটা বিশ্বে প্রায় ৯ মিলিয়ন এর মত মানুষ টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিল। যার মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই ছিল উচ্চ আয়ের দেশগুলোর।

টাইপ-২ঃ টাইপ-২ সাধারন ডায়াবেটিস এর অন্তর্ভুক্ত। যার মানে হলো ১০০% ভাগের মধ্যে প্রায় ৯৫% মানুষ টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়। এর মূল কারন হল বংশানুযায়ী অথবা অনিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন। কিন্তু, এটা মোটেও টাইপ-১ এর মত ভয়াবহ না কারন টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধযোগ্য। সঠিক ভাবে চললে, সঠিক খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রন এবং প্রতিনিয়ত ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চললে টাইপ-২ ডায়াবেটিস অচিরেই প্রতিরোধ করা যাবে।

আমরা মোটামুটি সকলেই জানি, যে খাওয়ার আগে পেট খালি থাকার কারনে ডায়াবেটিস এর লেভেল কম থাকে। আর ভরা পেটে সেটা বেড়ে যায়। কারো ক্ষেত্রে স্বাভাবিক স্তর থাকে আবার কারো ক্ষেত্রে অনেক বেশি পরিমানে বেড়ে যায়। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কতটুকু হলে স্বাভাবিক হবে সেটা নির্ভর করে কিভাবে অথবা কোন উপায়ে ডায়াবেটিস মাপা হবে তার উপর। কেননা, হাসপাতালে শরীরের শিরা থেকে রক্ত নিয়ে ল্যাবটেস্ট করা হয় আর বাসায় বা ফার্মেসীতে গ্লোকোমিটারের মাধ্যমে আঙ্গুলের ডগায় রক্তনালী থেকে রক্ত নিয়ে ডায়াবেটিস পরিমাপ করা হয়। ফলে, বাসায় কিংবা ফার্মেসীতে মাপা হলে অনেকসময় সুগারের মাত্রা একটু বেশি আসে। তাই, এই দুই পদ্ধতিতেই খাওয়ার পর ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল সেটা সকলের জেনে রাখা উচিত।

গ্লোকোমিটারে ডায়াবেটিস মাপালেঃ আপনি জানেন কি একজন সুস্থ মানুষ যদি গ্লোকোমিটারে ডায়াবেটিস মেপে থাকেন , তাহলে খাবার খাওয়ার আগে সেটি ৪ পয়েন্ট থেকে ৬ পয়েন্ট হবে। আর যদি খাবার খাওয়ার ২ ঘণ্টা পর ডায়াবেটিস মাপেন, তাহলে সেটি ৮ পয়েন্ট এর নিচে থাকলে নরমাল বলা হয়।


ভরা পেটে ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল

ল্যাবে ডায়াবেটিস মাপালেঃ ল্যাবে পরীক্ষা করলে সুগারের পরিমান কমবেশি হতে পারে। কিন্তু, কারো যদি ৭-৮ পয়েন্টের বেশি সুগার থাকে তাহলে এটি প্রি-ডায়াবেটিস বলা হয়ে থাকে। কারো যদি এটি লেভেল বেড়ে ১১ পয়েন্টের অধিক বেড়ে যায় তাহলে সেটা মূল ডায়াবেটিস এর মধ্যে পড়ে। এমনটি হলে অতি দ্রুত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া জরুরী ।

ডায়াবেটিসের দুইটি প্রধান ধরণ আছে: অটো-ইমিউন বা জুভেনাইল ডায়াবেটিস বা টাইপ ১ ডায়াবেটিস (Type 1 Diabetes) এবং টাইপ 2 ডায়াবেটিস (Type 2 Diabetes)।

টাইপ 1 ডায়াবেটিস: এই ডায়াবেটিস মূলত অল্পবয়স্কদের মধ্যে বেশি হয়ে থাকে এবং এটি হলে রোজ ইনসুলিন ইনজেকশন প্রয়োজন হতে পারে।

টাইপ 2 ডায়াবেটিস: টাইপ 2 ডায়াবেটিস এর ক্ষেত্রে ডায়েট এবং ব্যায়ামের করলে কন্ট্রোল করা যেতে পারে, কিন্তু কিছু রোগীদের ক্ষেত্রে মেডিকেশন বা ইনসুলিন এর সাহায্য নিয়ে ডায়াবেটিস এর নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করা হয়।

আপনার ডায়াবেটিস নিশ্চিত হলে, একজন দক্ষ চিকিৎসক থেকে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দেবেন। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে আপনার চিকিৎসকের নির্দেশনা অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে, স্বাস্থ্যকর খাবার সেবন করতে হবে, ঔষধ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে এবং ব্যায়াম করতে হবে।

ডায়াবেটিস এর লক্ষণঃ

ডায়াবেটিস এর লক্ষণগুলো শুধুমাত্র যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদেরই জানতে হবে এমনটা নয়। সচেতনতার জন্য প্রতিটি ব্যক্তিরই ডায়াবেটিস এর লক্ষণ সম্পর্কে জানা উচিত।সাধারণ কিছু লক্ষণ হলো-

১.বার বার প্রস্রাবের বেগ পাওয়া।
২.অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে যাওয়া।
৩.ওজন হ্রাস পাওয়া।
৪.শরীরে কোনো ঘা শুকাতে দেরী হওয়া।
৫.অধিকতর তৃষ্ণা পাওয়া।
৬.দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়।
৭.অতিরিক্ত ক্লান্ত লাগে।
৮.হাত পা অসার অসার হয়ে আসে।
৯.ত্বক স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি শুষ্ক হয়ে যায়।
১০.শরীরে স্বাভাবিকের চেয়ে অধিক সংক্রমণ হয়।

এসব লক্ষণ দেখা গেলেই যে ব্যক্তির ডায়াবেটিস আছে ঠিক তা নয়। এগুলো ডায়াবেটিস এর প্রারম্ভিক লক্ষণ। এসব লক্ষণ দেখা দিলে আপনার পারিবারিক ইতিহাস জানতে হবে এবং ডাক্তারের কাছে গিয়ে পরীক্ষা করাতে হবে।

ডায়াবেটিস হলে কি কি সমস্যা হয়ঃ

ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ, যার ফলে মারাত্মক সব জটিলতার সৃষ্টি হয়।যেমন-

১.মৃত্যু ঝুঁকি বেড়ে যায়।
২.অন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
৩.কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
৪.শরীরের কোনো স্থানে কেটে গেলে তা ভালো হতে চায় না ফলে পঁচন ধরার ভয় থাকে।
৫.অল্পতেই শরীর ও চেহারা নষ্ট হয়ে যায় বা বুড়িয়ে যায়।
৬.শরীর দূর্বল হয়ে যায়।
৭.হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়৷

ডায়াবেটিস কমানোর উপায় কি?

বিবিসির এক জরিপে দেখা যায়,সারা বিশ্বে প্রতি বছর গড়ে ৫৭ লক্ষ মানুষ ডায়াবেটিসের কারণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মারা যায়।WHO এর মতে, ১৯৮১ সালে ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ছিলো ১০৮ মিলিয়ন।আর ২০১৪ সালে এই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ৪২২ মিলিয়ন।২০১৯ সালে সারা বিশ্বে ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগে প্রায় ২ মিলিয়ন মানুষ মারা গেছে।তাই ডায়বেটিস কে অবহেলা না করে চলুন জেনে নেই ডায়াবেটিস কমানোর উপায় কি? এখনো পর্যন্ত ডায়াবেটিস প্রতিরোধের উপায় সফলভাবে জানা না গেলেও কিছু কিছু কাজ করলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব। খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ ও শারীরিকভাবে ফিট থাকা তাদের অন্যতম। এক গবেষণায় দেখা গেছে দিনে প্রায় ৯০ মিনিট ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম করলে ডায়াবেটিস ২৮% রোধ করা সম্ভব। এখনো যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা অনেকেই জানেন না ডায়াবেটিস কমানোর উপায় কি? ওজন স্বাভাবিক রেখেও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। সাথে আরো কিছু উপায় রয়েছে, যেমন –

১.ব্যায়াম
২.খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ
৩.ওজন সামঞ্জস্য রাখা
৪.পরিমিত ঘুম
৫.রাত না জাগা
৬.ভোরে ওঠা
৭.ভেজাল খাদ্য পরিহার
৮. সময়মতো খাবার গ্রহণ
৯.মদ্যপান, নেশা ও ধূমপান ত্যাগ
১০.চর্বি ও ফ্যাট জাতীয় খাদ্য পরিহার
১১.কোমল পানীয় পরিত্যাগ
১২.চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা

ডায়াবেটিস মাপার নিয়মঃ

ডায়াবেটিস নির্ণয় করতে সাধারণত দিনে দুইবার রক্তে সুগার বা চিনির পরিমাণ নির্ণয় করতে হয়। আবার অনেক ডাক্তার বলে থাকেন দিনে কমপক্ষে ৪ বার ডায়াবেটিস মাপা উচিত। দুই বার খালি পেটে আর দুই বার খাওয়ার ২ ঘন্টা পর। ডায়াবেটিস মাপতে হলে কমপক্ষে ১০ ঘন্টা আপনাকে না খেয়ে থাকতে হবে।অর্থাৎ রাতে খেয়ে সকালে খালি পেটে ডায়াবেটিস মাপতে হয়।দুপুরের খাবারের ১ ঘন্টা আগে রক্তে সুগার পরীক্ষা করতে হবে।আবার রাতের খাবারের ঠিক আগেও ডায়াবেটিস পরীক্ষা করতে হবে। আপনি হয়তো ভাবছেন বারবার ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা অনেক ঝামেলা। মোটেই কিন্তু তা নয়।এখন আপনি চাইলে ঘরে বসেই ডায়াবেটিস পরীক্ষা করতে পারেন।মাত্র ১ হাজার থেকে ১৫ শত টাকা দিয়েই এখন  ডায়াবেটিস মাপার যন্ত্র গ্লুকোমিটার কিনতে পারবেন।

আপনি কি জানেন ? ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায়?

মানবদেহে ডায়াবেটিস ৪০ mg/dl এর নিচে অথবা ৪০০ mg/dl এর চেয়ে বেশি হলে যেকোন সময় রোগী স্ট্রোক করে মৃত্যু হতে পারে। আবার অনেকসময় দেখা যায়, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস এর কারনে শরীরের যেকোন অঙ্গ যেমন কিডনি, হার্ট, স্নায়ু ইত্যাদি বিকল হয়ে যেতে পারে। যার ফলেও একজন ডায়াবেটিস রোগীর মৃত্যু ঘটতে পারে। যার ফলে বোঝা গেল ডায়াবেটিস অতিমাত্রায় কমে গেলে কিংবা অতিমাত্রায় বেড়ে গেলেই হতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু। তাই এটা বলার উপায় নেই যে কার ঠিক কত পয়েন্ট হলেই মৃত্যু হতে পারে।


আশা করি আমাদের লেখাটি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে এবং উপকারে আসবে। যদি কোন প্রকার উপকারে আসে তাহলে অবশ্যই আমাদের সাইটটি ফলো করূন। এর সাথে সাথে আপনাদের পছন্দের আরটিকেলটি বেছে নিন।

Next Post Previous Post