শীতে নবজাতকের যত্ন করণীয় ও পরিচর্যা

শীতে নবজাতকের যত্ন করণীয় ও পরিচর্যা প্রতিটি পিতা মাতা অবিচল চিন্তায় চিন্তিত তাদের নবজাতক শিশুসন্তানকে নিয়ে। কারণ শীত চলে এসেছে, এই সময় বিশেষ করে শিশুদের রোগ বালাই বেশি পরিমাণে দেখা দেয়। এ সময় সাধারণত ঠান্ডা জ্বর থেকে বিভিন্ন অসুখ, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া ইত্যাদি জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে। আমরা নবজাতক বলছি কিন্তু নবজাতক মূলত ১ থেকে ২৮ দিন বয়সের বাচ্চাদের বোঝালেও এ সময় ৬ মাস বয়সের শিশুদের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ সব কারণে আমাদের নবজাতকদের প্রতি একটু বেশি যত্নশীলহতে হবে।


তাহলে চলুন যেনে নিই শীতকালে নবজাতকের যত্নে কি করণীয় এবং তাদের এই  শীতে কীভাবে পরিচর্যা করতে হবে।


শীতে নবজাতকের যত্ন করণীয় ও পরিচর্যা








শীতে নবজাতকের যত্ন নিতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সমূহ:


 তাপমাত্রা:


সাধারণত শিশুরা মায়ের গর্ভে যেভাবে থাকে, সেখানকার তাপমাত্রার সাথে বাহিরের তাপমাত্রার অনেক বড় পার্থক্য। তাই হঠাৎ করে বাহিরের তাপমাত্রার সাথে মানিয়ে নিতে, নবজাতক শিশুদের একটু অসুবিধা হয়। তাই মায়ের গর্ভের মতো তাপমাত্রা বজায় রাখার জন্য বাসের ও তার থাকার জন্য পর্যাপ্ত তাপমাত্রা ব্যবস্থা করতে হয় অর্থাৎ তার থাকার জায়গাটা যেন রোজা তো তাপমাত্রা ব্যবস্থা থাকতে হবে তবে একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে যে মায়ের শারীরিক অবস্থার সাথে সাথে নবজাতকের শারীরিক অবস্থার একটা মিল রয়েছে অর্থাৎ সম্পর্কযুক্ত রয়েছে মার শরীর অসুস্থ তো দেখা দিলে নবজাতকের শরীরে অসুস্থ হয়ে পড়ে এ সময় মায়ের খাওয়া দাওয়া এবং পরিচর্যা বিশেষ নজরদারি করতাম


 বুকের দুধ:

আমরা জানি মায়ের বুকে শাল দুধ নবজাতকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃধিতে সহায়তা করে থাকে। তাই জন্মের পরপরই একজন নবজাতককে প্রচুর পরিমাণে মায়ের শাল দুধ খাওয়াতে হবে এবং ঘন ঘন মায়ের বুকের দুধ পান করাতে হবে। এতে করে নবজাতকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। তবে এ বিষয়ে মাকে সতর্ক থাকতে হবে যে, নবজাতক বুকের দুধ সঠিক ভাবে পাচ্ছে কি না।

 গরম কাপড়:


নবজাতক সহজে নিজের দেহের তাপমাত্রা ধরে রাখতে পারে না। কারণ নবজাতকের ত্বক ও শ্বাসযন্ত্র খুবই লাজুক। তার চাহিদা অনুযায়ী তাপমাত্রা ধরে রাখার জন্য, শুকনো আরাম দায়ক কাপড় দিয়ে তার দেহের উষ্ণতা ধরে রাখতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন  কাপড় নরম ও কোমল হয়।



 শিশুর গোসল:


নবজাতক শিশুর জন্য গোসল সপ্তাহে দু একবার হলে ভালো হয়। এর পর থেকে অর্থাৎ ৩০ দিনের বেশি বয়সী শিশুদের নিয়মিত গোসল করানো যায়। তবে তার ওজনের উপর লক্ষ্য রাখতে হবে, কম ওজনের শিশুর প্রতিদিন গোসল না করানোই ভালো। আবার যদি তাদের সর্দি কাশি ও নিউমোনিয়ার লক্ষ্যণ থাকে তাহলে তাকে গোসল করানো যাবে না। এখন শীতকাল তাই যে দিন বেশি ঠান্ডা বা রোদ/ সূর্য ওঠে না সে দিন শিশু দের গোসল না করিয়ে, উষ্ণ গরম পানি দিয়ে গা হাত পা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছিয়ে দিতে হবে।

 শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানি:


যেহেতু শীতকালে রোগ বালাই বেশি পরিমাণে দেখা দেয়, আর নবজাতক শিশুদের  ক্ষেত্রে এর প্রকোপ টা একটু বেশি থাকে কারণ নবজাতকের দেহ কোমল ও সংবেদনশীল হওয়ায়। তাই এ সময় আমাদের ঘরে ফ্লোর কার্পেট, লোমযুক্ত পোশাক ও কোম্বল রাখা উচিত। নবজাতককে সবসময় গরম কাপড়েরমধ্যে রাখা উচিত। পরিবারের কোন সদস্যের যদি সর্দি কাশি ও জ্বর হয় তাহলে নবজাতককে তাদের থেকে দুরে রাখতে হবে। এ সময় নবজাতক কে যথাসম্ভব ঘরের ভিতরে রাখতে হবে।


 ত্বকের যত্ন:


শিশুর ত্বক অতি কমল হওয়ায় এই শীতে চর্মরোগ সহ বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যাধি দেখা দিতে পারে। এমতাবস্থায় শিশুর ত্বকের প্রপার যত্নের জন্য অলিভ অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে। অনেকেই মনে করেন নবজাতকের মাথায় বেশি তৈল দিলে অনেক সময় নবজাতকের মাথায় বাদামি রং এর আস্তারন  দেখা যায়। আসলে এটা কোন আস্তারন নয়। একে বলে "ক্রেডল ক্যাপ" এই ক্রেডেলে ক্যাপ মাথায় অতিরিক্ত সেবামূলক বা তেল উৎপান্ন হওয়ার কারনে। ডাক্তারের পরামর্শ নিলে এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।


 ডায়পার:


শিশুদের ক্ষেত্রে ডায়পার  যত্ন একটি গুরুত্বপূর্ণ যত্নের ভিতরে পড়ে।  কারণ আমরা নবজাতক শিশুদের মলমত্র থেকে বাঁচার জন্য ডাইফার ব্যবহার করি। তবে ডায়পার  ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষ নজরে রাখতে হয়।  কারণ অধিক সময় ধরে ব্যবহার করা হলে, মল মূত্র শিশুদের গায়ে লেগে যেতে পারে। এর ফলে শিশুর গায়ে বিশেষ ধরনের লালচে ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। তবে এক্ষেত্রে শিশুদের শরীরের জন্য বিশেষ ধরনের একটি অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম 'অ্যান্টি ক্রাশ' ব্যবহার করা যেতে পারে।
তাই সে শুধু ডায়াপার পড়লে অবশ্যই নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।

 রোদ:


রোদ শিশুদের জন্য একটি অপরিহার্য উপাদান। কারণ জন্মের পরে শিশুদের সকালের হালকা রোদ গায়ে লাগানো উচিত। এতে করে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরণ হয় ও হাড় শক্ত হয়। এছাড়া শিশুর ব্যবহৃত লেপ দর্শক কম্বল বালিশ চাদর ইত্যাদি কড়া রোদে দিয়ে শুকাতে হয় এবং রোদের থেকে তোলার পর খুব সুন্দর করে পরিষ্কার করে ঘরে আনতে হয়। যাতে করে এতে ধুলাবালি লেগে না থাকে। তবে বিশেষভাবে নজর রাখতে হয় যে শীতের দিনে নবজাতক শিশুকে ঘরের বাইরে না নিয়ে জালানো অথবা দরজার সামনে বসে গায়ে রোদ লাগেনা ব্যবস্থা করা।


 সতর্কতা:


এত সব কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরেও আমাদের শিশুদের ঠান্ডা জনিত নানা ধরনের রোগ দেখা দেয়। তাই লক্ষ্য রাখতে হবে যে যদি শিশুর ঠান্ডা লেগে নাক বন্ধ হয়ে যায়, বুকে কফ জমে যায় সাথে ঘর ঘর শব্দ হয়, তাহলে দেরি না করে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। তবে এ সমস্যা বড় ধরনের কোন সমস্যা নয় মনে করে অনেক সময় অবহেলা করা হয় যার। ফলে শিশুর নিউমেনিয়া দেখা দিতে পারে। যা একদমই কাম্য নয়। তবে এ সমস্ত সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে অনেক সময় আমরা ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহার করে শিশুকে নানা ধরনের ওষুধ খাওয়াই, যেটা খুব বিপদজনক হতে পারে। তাই অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া শিশুকে কোন প্রকার ওষুধ সেবন করানো যাবে না।



শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায়


শীতে নবজাতকের যত্ন করণীয় ও পরিচর্যা



শীতের শুরু মানেই নানা ধরনের রোগ জীবনে মাথা ছাড়া দিয়ে ওঠে। শরতের শেষ এবং হেমন্তের শুরুতেই কুয়াশা পড়তে শুরু করে। এ সময় কখনো গরম কখনো আবার ঠান্ডা অনুভূত হয়। যার ফলে আমাদের নানা ধরনের রোগ ব্যাধি যেমন সর্দি কাশি ও জ্বর লেগেই থাকে। তবে এ সময় কোরোনার সংক্রমণ কিছুটা কমে গেলেও ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। এই সমস্ত রোগের সঙ্গে লড়াই করতে গেলে শিশুর শরীরে রোগ  প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে হবে।  চিকিৎসকের মতে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য মৌসুমী সবজি ফলমূল খাওয়ানো উচিত। এ সমস্ত খাবারে আমাদের বাচ্চাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা। তাই ওষুধের প্রতি আমাদের নির্ভরতা কমিয়ে, পুষ্টিগুণ সম্পন্ন শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়ার  উপরে বেশি জোর দিতে হবে।



প্রতি দিন কোন কোন খাবার খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে সে সম্পর্কে জানবো ?



১) মিষ্টি আলু


আলু এমন একটি সবজি যা প্রতিটি পরিবারে কমন থাকেন। তবে শিশুদের জন্য তাদের শরীরের চাহিদা মতো পুষ্টি গুণ পূরণ করতে আমরা এই সাধারণ আলোর পরিবর্তে লাল আলু বা মিষ্টি আলু ব্যবহার করতে পারি। মিষ্টি আলোতে থাকে নানা ধরনের ভিটামিন। যেমন: পটাশিয়াম ভিটামিন ফাইবার যা শিশুদের রক্ত প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সাহায্য করে।



২) গুড়


গুড়  শিশুদের জন্য একটি সুষম খাদ্য। কারণ শিশুদের সব সময় মিষ্টির প্রতি চাহিদা একটু বেশি থাকে। তাই তাদের কৃত্রিম চিনি বা চকলেট জাতীয় খাবার না দিয়ে, আমরা গুড় ব্যবহার করতে পারি। এই গুড়ে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন থাকে যেমন ভিটামিন বি১২, বি৬, ক্যালসিয়াম এবং খনিজ পদার্থ যা শিশুদের  সুস্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।


৩) আমলকি


আমলকি ঋতু পরিবর্তনের ফল হিসেবে শুধু বড়দের জন্য নয়। এটি শিশুদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আমলকি খেলে ঠান্ডা, সর্দি ,কাশির মত সমস্যাগুলো দূর হয়। তাই ছোটবেলা থেকে আমলকি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। আমলকিতে থাকায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সর্দি কাশি সহ বাচ্চাদের হজম সংক্রান্ত সমস্যা দূর করতে সক্ষম।


৪) খেঁজুর


খেজুর একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান, এটি আমাদের শিশুদের জন্য খুব উপকারী বা গুরুত্বপূর্ণ একটি খাদ্য। আমরা জানি শৈশব থেকে কৈশোরে পা রাখার যে সময়টা এই সময়টায় শিশুদের শরীরের হরমোনের তারতম্য ঘটে। তাই খেজুর এমন একটি উপাদান শিশুদের এই হরমোনের তারতম ঘটাকে রোধ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।




৫) ভিটামিন সি জাতীয় ফল


শিশুদের জন্য যে সমস্ত ফল খুবই গুরুত্বপূর্ণ তার ভিতরে ভিটামিন সি যুক্ত ফল এর অবদান অপরিসীম। কারণ ভিটামিন সি শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বেশি সহায়তা করে। যদিও ডাক্তাররা মৌসুমী  সব ধরনের ফলমূল শিশুদের খাওয়ার জন্য পরামর্শ দেন।  তবুও খেয়াল রাখতে হবে যেন এ সমস্ত ফলের ভিতরে ভিটামিন সি যুক্ত ফল অবশ্যই থাকে। যেমন লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে, এছাড়াও রয়েছে স্ট্রবেরি আঙ্গুর ইত্যাদি।
Next Post Previous Post