চোখ ওঠা রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা : বাচ্চাদের চোখ উঠার ড্রপ

  চোখ ওঠা রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা : বাচ্চাদের চোখ উঠার ড্রপ


 

  চোখ ওঠা রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা : বাচ্চাদের চোখ উঠার ড্রপ চোখ ওঠা একটি সাধারণ ও কমোন বিষয় হিসেবে দেখা হয় আমাদের দেশে। কারন চোখে ওঠাকে আমাদের দেশে বেশি গুরুত্বপূর্ণ রোগ হিসেবে ধরা হয় না। এর কারন চোখ ওঠার অসুখের জন্য ঔষুধ খাওয়ার প্রয়োজন হয় না। এমনিতেই কিছু দিনের মধ্যে শেরে যায়। কিন্তু আসলে কোন অসুখই ছোট নয়। কারণ আমরা দেখেছি অনেক সময় এই ছোট চোখ ওঠা রোগের থেকেই অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যায়। অনেক সময় চোখ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই চোখ ওঠা কে ছোট না ভেবে গুরুত্বের সাথে তা চিকিত্সা গ্রহণ করা উচিত।


চোখ ওঠা রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা : বাচ্চাদের চোখ উঠার ড্রপ





চোখ উঠার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের সাথে থাকুন। আর পুরো আরটিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আশা করি আপনার সকল সমস্যার সমাধান এখানে পেয়ে যাবেন। ডাক্তারি ভাষায় চোখ ওঠাকে কনজাঙ্কিটভাইটিস বলা হয়ে থাকে সুতরাং চোখ ওঠার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব চলুন তাহলে শুরু করা যাক

চোখ উঠা কি ছোঁয়াচে রোগ?

আমাদের দেশের গ্রাম্য ভাষায় একটি কথা আছে যে চোখ উঠলে তাকে ছোঁয়া যাবে না চোখ ওটা একটা ছোঁয়াচে রোগ। অর্থাৎ প্রাচীন কাল থেকে ধারণা আছে যে চোখটা একটু ছোয়েছে এবং সংক্রম রোগ। তবে কিছু কিছু ভ্রান্ত ধারণা মানুষের মধ্যে এখনো বেঁচে আছে যে চোখটা বেশি দেখে থাকলে আরেকজনের চোখ ওঠে এটা একদমই ভিত্তিহীন কথা কারণ রোগ জীবনে কখনো আলোকরশ্মির মাধ্যমে একজনের থেকে আরেকজনের মধ্যে ছড়াতে পারে না এ বিষয়ে আমেরিকান একাডেমি অফ অপথ্যালমোনজি প্রতিষ্ঠানটি তাদের নিজস্ব ওয়েব সাইডে প্রকাশ করেন যে, রোগ জীবাণু কখনো আলোক রশ্মি মাধ্যমে ছড়ায় না। তারা আরো বলেন যে, চোখ ওঠা বা কনজাঙ্কিটভাইটিস রোগে আক্রান্ত মানুষের হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে ছড়াতে পারে। যেমন ধরুন এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহারীত কাপড়, রূমাল, বালিশ, টিসু ইত্যাদি।  অর্থাৎ কনজাঙ্কিটভাইটিস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসলে এই ব্যক্তি ও এই রোগে আক্রান্ত হবে।
সুতরাং এই তথ্য থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, চোখ ওঠা বা কনজাঙ্কিটভাইটিস একটি ছোঁয়াছে রোগ।



বাচ্চাদের চোখ উঠার লক্ষণ সমূহ:


বাচ্চাদের চোখ উঠলে যে সকল লক্ষণ প্রকাশ পায় সে সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো।

  • চোখ লাল হয়ে যাওয়া ( প্রথমে এক চোখ পরে দুই চোখ লাল হওয়া)
  • অনেক সময় চোখ দিয়ে পানি পড়া
  • চোখের মধ্যে কাটাকুটি খচখচ করে ফোটে
  • চোখের ভিতরে কিছু পড়ছে এমন মনে হয় 
  • চোখের পাতা ফুলে যায় চোখ ব্যথা ব্যথা অনুভূত হয় 
  • চোখে নিউ কার জাতীয় তরল অথবা পূজার মত ময়লা জমা হয় 
  • চোখের সাদা অংশের উপর পর্দা পড়ে যায় 
  • চোখ জ্বালাপোড়া করে 
  • ঘুম থেকে ওঠার পরে মনে হয় চোখের পাতা একটি সাথে আরেকটি লেগে গেছে 
  • অনেক সময় যদি কোর্ট নিয়ে আক্রান্ত হয় তাহলে চোখে ঝাপসা দেখা যায়।


শিশুর চোখ উঠলে কী করবেন


এই ভাইরাস সহজেই আক্রান্ত রোগীর থেকে অন্যদের মাঝে ছড়ায়। সুতরাং, প্রাপ্তবয়স্কদের বা শিশুদের চোখ উঠলে যা করতে হবে তা হল:

নিয়মিত আপনার হাত ধুয়ে নিন। নিয়মিত আপনার হাত হালকা গরম পানি, সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে কমপক্ষে 20 সেকেন্ড ধরে ধুয়ে ফেলুন। আপনার হাত ভাল করে ধুয়ে নিন, বিশেষ করে খাওয়ার আগে, চোখের ড্রপ ব্যবহার করার আগে, আপনার চোখ পরিষ্কার করার আগে। এছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত রুমাল, তোয়ালে, কাপড়, বিছানার চাদর, বালিশ ইত্যাদি স্পর্শ করলে শিশুদের ফোঁটা দেওয়ার আগে গরম পানি ও সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিতে হবে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করার ক্ষেত্রে, আপনাকে অবশ্যই 60% অ্যালকোহলযুক্ত স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে।

হাঁচি দেওয়ার সময় টিস্যু বা রুমাল দিয়ে মুখ ঢেকে রাখুন। টিস্যু ব্যবহার করলে বর্জ্যের ঝুড়িতে ফেলে দিন। আপনি যদি রুমাল ব্যবহার করেন তবে গরম জল এবং সাবান বা ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এছাড়াও আপনার হাত ভালভাবে ধুয়ে নিন।

চোখ থেকে পুঁজ বা পানি বের হলে তা পরিষ্কার ভেজা তোয়ালে বা কাপড় বা তুলা দিয়ে দিনে কয়েকবার মুছে ফেলতে হবে। চোখ খোঁচা বা আঁচড়াবেন না। এই ক্রিয়াগুলি চোখের অবস্থা খারাপ করবে এবং এক চোখ থেকে অন্য চোখে সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া আক্রান্ত চোখের ড্রপের বোতল ভালো চোখে ব্যবহার করা যাবে না। বিভিন্ন ড্রপ ব্যবহার করতে হবে।

আক্রান্ত রোগীর ব্যবহৃত কাপড়, রুমাল, তোয়ালে, মাস্ক, বিছানার চাদর, বালিশের কভার, তোয়ালে সাবান বা ডিটারজেন্ট এবং গরম পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।

  • ব্যবহৃত চশমা, চশমার বাক্স ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।

  • যদি ডাক্তার কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করার পরামর্শ দেন, তাহলে লেন্সগুলিকে নির্দেশিতভাবে পরিষ্কার করে সংরক্ষণ করতে হবে। তবে এবার না পড়াই ভালো।

  • হাত না ধুয়ে চোখ স্পর্শ করবেন না।

  • আক্রান্ত অবস্থায় ব্যবহৃত ব্রাশ, মেকআপ, কন্টাক্ট লেন্স এবং অন্যান্য সামগ্রী ফেলে দিতে হবে।


নিম্নলিখিত উপসর্গ দেখা দিলে শিশুদের একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত। 28 দিনের কম বয়সী বাচ্চাদের চোখ কাঁপানোর কোনো কারণ দেখলে অবিলম্বে ডাক্তার দেখাতে হবে।

  • দুই দিনের বেশি চোখ লাল থাকলে।

  • দুই দিনের বেশি চোখে ব্যথা হলে বা অসুস্থ বোধ করলে।

  • যদি এক বা দুই সপ্তাহের বেশি চোখের স্রাব বা কনজেশন থাকে।

  • যদি চোখ কাঁপানোর উপসর্গ বেশি হয়।


ফোলা চোখের জন্য ঘরোয়া প্রতিকার


চোখ ওঠা রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা : বাচ্চাদের চোখ উঠার ড্রপ



প্রথমে একটি পরিষ্কার তুলা বা সাদা পরিষ্কার সুতির নরম কাপড় গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর আস্তে আস্তে পানি ছেঁকে দিন এবং সেই কাপড় দিয়ে চোখের পাতা ও চোখের পাতা দিনে কয়েকবার পরিষ্কার করুন। চোখে যেন চাপ না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। চোখের উপর চাপ পড়ে এমন কাজ করবেন না। মোবাইল, কম্পিউটার, ছোট লেখা পড়া থেকে বিরত থাকুন।


চোখের ফোলা সাধারণত 7-10 দিনের মধ্যে ভাল হয়ে যায়। তবে যদি এটি দীর্ঘস্থায়ী হয় তবে আপনাকে অবশ্যই একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে। কখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে:

  • দুই সপ্তাহের বেশি চোখ উঠলে।

  • বারবার চোখে ময়লা জমে।

  • 28 দিনের কম বয়সী শিশুদের চোখ লাল হলে অবিলম্বে একজন ডাক্তার দেখাতে হবে।

  • চোখ খুব ব্যথা হলে চুলকানি ও প্রচণ্ড মাথাব্যথা হয়।

  • আলোর দিকে তাকালে চোখ ব্যাথা হয়।

  • ঝাপসা দৃষ্টি বা চোখ কাঁপানো।



শিশুদের চোখের ড্রপ


শিশুদের কনজেক্টিভাইটিস বিভিন্ন চোখের ড্রপ দিয়ে চিকিত্সা করা যেতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ:


কৃত্রিম অশ্রু:


এই ড্রপগুলি সাধারণত শুষ্ক এবং চুলকানি চোখ কমাতে সাহায্য করে। তদুপরি, এই ধরণের ড্রপ যে কোনও ধরণের চোখ তুলতে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত ফার্মাসিতে, এই ধরনের ড্রপ লুব্জেল, ড্রাইলাইফ, অ্যাকুয়াফ্রেশ এবং টিয়ারফ্রেশ সহ বিভিন্ন নামে পাওয়া যায়। এই ড্রপগুলি ব্যবহারের আগে প্রদত্ত নির্দেশাবলী অনুযায়ী চোখে ব্যবহার করা উচিত।

অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ:


ব্যাকটেরিয়াল কনজেক্টিভাইটিস আক্রান্ত শিশুদের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ সুপারিশ করা হয়। অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপগুলি সাধারণত সংক্রমণ দ্রুত পরিষ্কার করতে, জটিলতা কমাতে এবং চোখের ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে সাহায্য করে। অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপগুলি সাধারণত ব্যাকটেরিয়াল কনজেক্টিভাইটিসের চিকিত্সার জন্য নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য সুপারিশ করা হয়:

  • চোখের চারপাশে পুঁজের মতো তরল জমে

  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম বা শিশুর চোখ থাকলে

  • নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়া যেমন গনোরিয়া এবং ক্ল্যামাইডিয়া দ্বারা সংক্রমণ।

অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ বা ক্লোরামফেনিকল নামক মলম শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্ক উভয়ের ক্ষেত্রেই ব্যাকটেরিয়াল কনজেক্টিভাইটিসের চিকিৎসার জন্য সুপারিশ করা হয়। তবে ব্যবহারের আগে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে।


অ্যান্টিহিস্টামিন ড্রপস:


এই ড্রপগুলি সাধারণত শিশুদের জন্য সুপারিশ করা হয় যাদের অ্যালার্জির কারণে চোখ চুলকায় তাদের জন্য। ডাক্তাররা কখনও কখনও চোখের ড্রপ বা মলম সহ মৌখিক ওষুধ লিখে দেন।



দ্রষ্টব্য: অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে ড্রপ ব্যবহার করা উচিত নয়।



Next Post Previous Post