নাক ডাকার সমস্যা চিরতরে দূর করার উপায় নাক ডাকার সমস্যা যে বেশ বিরক্তিকর ও বিব্রতকর, তা নতুন করে বলে দিতে হয় না। যিনি নাক ডাকেন তিনি না
বুঝলেও পাশে থাকা মানুষটির ঘুম হারাম হয়ে যায়। নাক ডাকার সমস্যা আপাত দৃষ্টিতে খুব বেশি ক্ষতিকর মনে না
হলেও এটি আসলে বেশ খারাপ একটি সমস্যা। এটিকে হৃদরোগের লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। তাই নাক ডাকা
সমস্যাকে অবহেলা নয় মোটেই। সমস্যাটি কীভাবে দূর করা যায় সে বিষয়ে ভাবতে হবে।
নাক ডাকা থেকে মুক্তির কয়েকটি উপায়:
শোয়ার ভঙ্গি পাল্টানো:
পাশ ফিরে শুলে এ সমস্যা কমতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিত হয়ে শোয়ার অভ্যাস ত্যাগ করতে পায়জামায়
কোমরের কাছে টেনিস বল রাখতে পারেন। এতে ঘুমের মধ্যে আপনা-আপনি চিত হয়ে যাওয়া থেকে রেহাই পাবেন।
ওজন কমানো:
অতিরিক্ত ওজন নাক ডাকার সাধারণ কারণগুলোর একটি। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন। এই সমস্যা
কমবে।
মদ্যপান ও ধূমপানের অভ্যাস ছাড়ুন:
অ্যালকোহল কিংবা মদজাতীয় পানীয় জিভের পেশিগুলো শিথিল করে দেয়। এতে শ্বাসনালি সংকুচিত হয়ে পড়ে। ফলে
মানুষ নাক ডাকতে পারে। এই অভ্যাস ত্যাগ করুন।
ভালো ঘুমের চেষ্টা:
অনিদ্রার অনেকগুলো কুফলের মধ্যে একটি নাক ডাকা। প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমোতে যাওয়া এবং
নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করুন।
ঘুমোনোর আগে প্রচুর জল খান:
এই অভ্যাসও নাক ডাকার সমস্যা কমিয়ে দিতে পারে।
ঘরোয়া ভাবে খুব সহজে এবং বেশ সুস্বাদু উপায়ে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। জানতে চান কীভাবে? তবে
এবার জেনে নিন সেই সহজ পদ্ধতি-
1.গাজর-আপেলের জুস শুনতে সাধারণ মনে হলেও এই জুসের রয়েছে শ্বাসনালী কিছুটা চওড়া ও শ্বা’সনালীর
মিউকাস দ্রুত নিঃসরণের ক্ষমতা যা নাক ডাকা থেকে মুক্তি দিতে বেশ কার্যকর। – ২ টি আপেল ছোটো ছোটো
খণ্ডে কেটেনিন এবং ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করুন।এবার ২ টি গাজর কেটে ব্লেন্ডারে দিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। এরপর
একটি লেবুর ১/৪ অংশ কেটে রস চিপে এতে দিয়ে দিন এবং ১ চা চামচ আদা কুচি দিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। কিছুটা
পানি দিয়ে বেশ ভালো করে ব্লেন্ড করে নিয়ে ছেঁকেনিন। এই পানীয়টি প্রতিদিন পান করুন। নাক ডাকার সমস্যা
দূরে পালাবে।
2. হলুদের চা
হলুদ প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক। এটিও বেশ কার্যকর নাক ডাকা সমস্যার সমাধানে। ২ কাপ পরিমাণ পানি
চুলায় বসিয়ে জ্বাল দিতে থাকুন। এতে ১ চা চামচ পরিমাণ কাঁচা হলুদ বাটা দিয়ে দিন ।এবার আবার জ্বাল করতে
থাকুন। যখন পানি ফুটে ১ কাপ পরিমাণে চলে আসবে তখন তা নামিয়ে ছেঁকে ফেলুন। এবার ১/২ চা চামচ মধু ও
২/৩ ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন। প্রতিদিন ঘুমুতে যাওয়ার ৩০ মিনিট আগে পান করে নেবেন। দেখবেন নাক ডাকার সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
নাক বন্ধের সমস্যা দূর করার উপায়:
শীতে অনেকেরই অসাবধানতাবশত ঠান্ডা লেগে যায়। এর বহিঃপ্রকাশ ঘটে সর্দি-কাশি আর নাক বন্ধের
মাধ্যমে। বিশেষ করে যাঁদের অ্যালার্জিজনিত সমস্যা আছে। কারণ, এ সময় পরিবেশে ধুলাবালু বেশি ও বাতাস
শুষ্ক থাকে। এ ছাড়া যাঁদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাঁদের অল্পতেই ঠান্ডা লেগে নাক বন্ধ হয়ে যায়।
নাক বন্ধ হলে দ্রুত পরিত্রাণের জন্য অনেকে নোজল ড্রপ বা ওষুধের সাহায্য নেন। তবে এসব ওষুধের
অতিরিক্ত ব্যবহার স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। অতিরিক্ত ব্যবহারে একটা সময় এসব ওষুধ কোনো কাজে আসে
না। সে ক্ষেত্রে ঘরোয়া কিছু সমাধান চেষ্টা করা যেতে পারে।
ঘরোয়া চিকিৎসা
1.একটি পাত্রে গরম পানি নিয়ে এর মধ্যে একটি মাইক্রোফাইবার তোয়ালে বা রুমাল ডুবিয়ে ভালো করে চিপে
নিতে হবে। এবার এ রুমাল নাকে-মুখে দিয়ে রাখুন ৫ থেকে ১০ মিনিট। এ প্রক্রিয়া ৩-৪ বার করুন। তাহলে নাক
বন্ধভাব অনেকটা কেটে যাবে ও স্বস্তি পাবেন।
2.গরম পানিতে এক চা-চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে পান করুন। এই পানীয় দিনে দুইবার পান করবেন।
ভিনেগারে থাকা অ্যাসিটিক অ্যাসিড এবং পটাশিয়াম বন্ধ নাক খুলতে, বুকের কফ অপসারণ এবং ভাইরাস দূর
করতে সাহায্য করে।
3.একটি পাত্রে গরম পানি নিয়ে এর মধ্যে কিছু পুদিনাপাতা দিন। এবার পাত্রটি কিছুক্ষণ ঢেকে রাখুন। তারপর
কম আঁচে ৫ থেকে ১০ মিনিট সেদ্ধ পানিটা গরম করে নিন। এই পানীয় দিনে দুইবার চায়ের মতো করে পান করুন।
পুদিনার পানীয় বুকের প্রদাহ কমায় ও বন্ধ থাকা নাক খুলতে সাহায্য করে।
4.এক লিটার পানি ভালো করে ফুটিয়ে এর মধ্যে কয়েক ফোঁটা ইউক্যালিপটাস তেল দিন। এবার তোয়ালে দিয়ে মুখ
ঢেকে ভাপ নিন। এটা করলে কয়েক মিনিটের মধ্যে নাকের বন্ধভাব খুলে যাবে। সঙ্গে মাথাব্যথা থাকলেও কিছুটা
উপশম হবে।
5.এক গ্লাস পানিতে আধা চা-চামচ লবণ দিন। এবার নাক দিয়ে এ পানি টেনে ভেতরে নিন। চাইলে দিনে দুই থেকে
তিনবার এটা করতে পারেন। ড্রপের সাহায্যে নাকেও দিতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে দুই থেকে তিন ফোঁটার বেশি নয়।
নাকের মিউকাস পরিষ্কার করতে গ্রিন টিও উপকারী। এতে নাক পরিষ্কার হওয়ার পাশাপাশি শরীর থেকে টক্সিনও দূর হয়ে যায়।
বন্ধ নাক খুলতে ভালো কাজ করে গোলমরিচ। হাতের তালুতে অল্প একটু গোলমরিচগুঁড়া নিয়ে সামান্য শর্ষের
তেল দিন। আঙুলে লাগিয়ে নাকের কাছে ধরুন। হাঁচি হবে। সেই সঙ্গে নাক, মাথার জমাটভাবও কেটে যাবে।
এক কাপ টমেটোর রস, এক টেবিল চামচ রসুনকুচি, এক টেবিল চামচ লেবুর রস, ঝাল সস ও এক চিমটি লবণ
মিশিয়ে নিন। এ চা দিনে দুইবার খান। ঠান্ডা, কাশি ও নাক বন্ধভাব দ্রুতই কেটে যাবে।