কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার এবং কিডনি সুরক্ষায় নিয়মিত যে খাবার খাবেন
কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার এবং কিডনি সুরক্ষায় নিয়মিত যে খাবার খাবেন আমরা সবাই জানি সুষম খাদ্য আমাদের শরীরের জন্য কতোটা প্রয়োজন। পুষ্টি বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়তই নিত্যনতুন খাদ্যের বিভিন্ন দিক উন্মোচন করে চলেছেন।
কিডনি সুরক্ষায় এমন কিছু খাবারকে চিহ্নিত করা হয় যেগুলো স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। বিশেষ এই খাদ্যগুলোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ এন্টিঅক্সিডেন্ট। কিডনি আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যা আমাদের রক্ত থেকে অতিরিক্ত পানি ও জীবাণু বের করে দিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
প্রাকৃতিক ছাঁকনি হিসাবে ভুমিকা রাখা ছাড়াও এটি লোহিত রক্ত কণিকা সমুহকে উদ্দীপ্ত করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতেও সাহায্য করে। দুঃখজনক হলেও সত্যি এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটিকে সুস্থ রাখা বিষয়ে আমরা অনেক উদাসীন। কিডনির বিষয়ে সচেতন না হলে শরীরে ভয়াবহ অবক্ষয়সহ চিকিৎসার জন্য অনেক খরচ হতে পারে। তাই দেরি না করে এই বিষয়ে দ্রুত সচেতন হতে হবে এবং প্রতিদিন খেতে হবে নিয়ম মেনে।
কিডনি সুরক্ষায় নিয়মিত যে খাবার খাবেন
এগুলো হলো:
আপেল
বলা হয়ে থাকে প্রতিদিন একটি করে আপেল খেলে ডাক্তার থেকে দূরে থাকা যায়। নিয়মিত আপেল খাওয়ার অভ্যাস করলে তা কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখতে সাহায্য করে।
এছাড়াও রক্তে কোলেস্টেরল কমাতে, হৃদরোগ এবং ক্যানসার প্রতিরোধেও এর ভূমিকা অনন্য।
লাল আঙুর
এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফ্লাভনয়েড, যা আপনার কিডনিকে রাখবে সদা তরুণ।
এটি রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
ডিমের সাদা অংশ
আমরা অনেকেই স্বাস্থ্য কথা চিন্তা করে ডিমকে খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দেই। কিন্তু আপনি কি জানেন ডিমের সাদা অংশই হচ্ছে বিশুদ্ধ প্রোটিন, যা আপনার কিডনির জন্য খুবই প্রয়োজন।
মাছ
মাছকে বলা হয়ে থাকে নিরাপদ প্রোটিনের উৎস। দৈনিক প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে মাংসের চেয়ে মাছের ভূমিকা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের পাশাপাশি মাছে রয়েছে ওমেগা৩ যা কিডনি, হার্ট এবং লিভারের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধী। এছাড়াও কোলেস্টেরল কমাতে এর ভূমিকা তো রয়েছেই।
কিডনি সুরক্ষায় নিয়মিত যে খাবার খাবেন
ক্যাপসিকাম
আপনার কিডনি সুস্থ রাখতে ক্যাপসিকাম হতে পারে প্রথম পছন্দ। সালাদ এবং যে কোনো রান্নাকে সুস্বাদু করতে এর জুড়ি নেই। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, সি, বি৬, ফলিক এসিড এবং ফাইবার। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ এন্টিঅক্সিডেন্ট লাইকোপিনের প্রধান উপাদান, যা কিনা ক্যান্সার প্রতিরোধেও সহায়ক।
পেঁয়াজ
পেঁয়াজের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ফ্লাভনয়েড, যা রক্তনালীতে চর্বি জমা প্রতিহত করে। এর এন্টিঅক্সিডেন্ট কিডনি জনিত উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। ক্যান্সার প্রতিরোধেও এর ভূমিকা রয়েছে।
রসুন
রসুনের গুণের কথা আমাদের সবারই জানা। এটি কিডনি প্রদাহ উপশম করার পাশাপাশি রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায়। কিডনি রোগীদের জন্য এর কোনো বিকল্প নেই।
বাঁধাকপি
বাঁধাকপিতে এন্টিঅক্সিডেন্ট এর খনি বললেও ভুল হবে না। এরা শরীরের ক্ষতিকারক ফ্রি রেডিকেলের বিরুদ্ধে কাজ করে আপনার কিডনি শক্তিশালী করার পাশাপাশি ক্যান্সার এবং হৃদরোগ প্রতিরোধে কাজ করে। এতে রয়েছে ভিটামিন কে, সি, বি৬, ফলিক এসিড, প্রচুর ফাইবার সমৃদ্ধ বাঁধাকপি রাখতে হবে খাদ্য তালিকায়।
ফুলকপি
বাঁধাকপির মতো ফুলকপিও পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। ফুলকপির একটি বিশেষগুণ হলো এটি শরীর থেকে বিভিন্ন বিষাক্ত উপাদান দূর করতে সহায়তা করে।
অলিভ ওয়েল
গবেষণায় দেখা গেছে যেসব দেশে অন্যান্য তেলের চেয়ে অলিভ ওয়েল বা জলপাই এর তেল ব্যবহার করা হয় সেসব দেশে কিডনি রোগ, হৃদরোগ, ক্যান্সার ইত্যাদি তুলনামূলক কম হয়। অলিভ ওয়েলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পলিফেনল যা এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে চমৎকার কাজ করে। রান্নায় অথবা সালাদে অলিভ ওয়েল ব্যবহার বাড়তি স্বাদ যোগ করে।
কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
সাইট্রাস জাতীয় ফল ; লেবু, কমলা, মাল্টা, জাম্বুরা, আঙুর এই ধরণের ফলকে বলা হয় সাইট্রাস ফল।
বেদানা বেদানা খেলে স্মৃতিশক্তি প্রখর হয় এমনটাই মত অনেক বিশেষজ্ঞের।
বেরি জাতীয় ফল বেরি জাতীয় ফলে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপকরণ।
এবং পানি পান করুন এটি ফলের তালিকায় নেই।
পানি : কিডনি পরিষ্কার এবং ডিটক্সিফাই করতে পানি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ কারণে নিয়মিত পর্যাপ্ত পানি পানের পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
ক্যানবেরি: স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে,ক্যানবেরি ফল এবং ক্যানবেরি জুস খাওয়া মূত্রনালীর সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।
চর্বিযুক্ত মাছ : স্যামন, টুনা জাতীয় চর্বিযুক্ত মাছ খাওয়া কিডনির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করতে পারে। ভারতীয় ন্যাশনাল কিডনি ফাউন্ডেশনের একটি সমীক্ষা অনুসারে, ওমেগা থ্রি চর্বি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া রক্তে চর্বির মাত্রা এবং রক্তচাপ কিছুটা কমাতে সাহায্য করতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ কিডনি রোগের ঝুঁকির কারণ। প্রাকৃতিক উপায় উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায় খুঁজে পাওয়া কিডনিকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে।
সাইট্রাস ফল : লেবু বা কমলা খেলে শরীরে আর্দ্রতা বজায় থাকে। এসব ফল কিডনি থেকে টক্সিন বের করে দিতেও সাহায্য করতে পারে। এসব ফলে উচ্চ মাত্রার সাইট্রেটের উপস্থিতির কারণে এটি হয়, যা কিডনিতে পাথর জমা প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে।
কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায়
শসা : শসার পানির পরিমাণ বেশি থাকে। খাদ্যতালিকায় শসা যোগ করলে শরীর সতেজ ও হাইড্রেট থাকবে । তাছাড়া, শসার মধ্যে মূত্রবর্ধক একটা প্রভাব রয়েছে, যা কিডনিতে পাথর প্রতিরোধে এবং কিডনি ভালোভাবে কাজ করতে সাহায্য করে।
সেলারি : সেলারি কম-ক্যালরিযুক্ত সবজি যা প্রাকৃতিক মূত্রবর্ধক হিসাবে , প্রস্রাবের উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে এবং শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয়।
কিছু খাবার আছে যা সব কিডনি রোগীকেই না খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। যেমন: ডাল, কোল্ড ড্রিংকস, আঁচার, গরু, খাসীর মাংস, ভাজা পোড়া খাবার, কফি, চানাচুর, পাপড়, বাইরের কেনা খাবার ও বাসি খাবার।
বাংলাদেশে কিডনিজনিত সমস্যায় আক্রান্ত লোকের সংখ্যা কোটির উপর ছাড়িয়ে গেছে। সঙ্গত কারণগুলি মধ্যে প্রধান এবং একমাত্র কারণ ভেজাল খাদ্যসামগ্রী, ক্যামিক্যাল মিশ্রিত ফলমূল, মাছ এবং রাসায়নিক খাদ্য দ্বারা মোটাতাজা করা মাংস। এছাড়া অজ্ঞতা, অসচেনতা এবং ভালোমানের খাদ্যদ্রবের দুষ্প্রাপ্যতা। শরীরের সুস্থতায় কিডনির ভালো থাকা খুব জরুরি। একটু অসতর্কতা হলে এই অঙ্গটির বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। যা পরবর্তীতে কিডনি ড্যামেজের মত সমস্যাও হতে পারে। তবে কিছুটা সচেতন হলে কিডনির সমস্যা অনেকেটা প্রতিরোধ করা সম্ভব।