শরীরের যত্ন নিতে যে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সার্বিক সুস্বাস্থ্য লাভের জন্য নিজের যত্ন নেয়ার কোন বিকল্প নেই — এ কথা চিকিৎসা গবেষণা অনুযায়ী প্রমাণিত। কিন্তু সন্তান প্রতিপালন করতে হয় বা সংসারের কাজ সামলাতে হয় এমন ব্যস্ত নারীদের ক্ষেত্রে সেলফ কেয়ার সহজ নয়। কর্মজীবী নারীদের জন্য তা আরও কঠিন। আপনার কর্মব্যস্ত দৈনন্দিন জীবনে কেন আর কিভাবে নিজের যত্ন নেবেন তা নিয়েই আলোচনা ঃ
শরীরের যত্ন নিতে যে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
শারীরিকভাবে সুস্থ থাকা আপনাকে আপনার সম্পর্ক সহ আরও ভাল সামগ্রিক স্বাস্থ্য পেতে সক্ষম করে । আপনি শুধুমাত্র একটি শরীর পান, তাই এটির যত্ন নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। আপনার শরীর এবং আপনার পরিবারের স্বাস্থ্যের ইতিহাস জেনে, আপনি আপনার জন্য "স্বাভাবিক" কী তা বের করতে শুরু করতে পারেন।
আপনি যখন নিজের যত্ন নিতে শুরু করেন, তখন একসঙ্গে অনেকগুলো ব্যাপার ঘটে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিকতম এক গবেষণা বলছে, মানুষ যখন নিজেই নিজের যত্ন নেয় এবং নিজের সঙ্গ উপভোগ করে, তখন তার শরীরের মেটাবলিজম সিস্টেম আরও সক্রিয় হয়। আরও ভালো কাজ করে। ফলে আপনি সারা দিনে যে খাবার গ্রহণ করেন, সেগুলো সহজেই এনার্জিতে রূপান্তরিত হয়। আর আপনার কর্মক্ষমতা বাড়ে। আপনি সারা দিন এনার্জি নিয়ে ফুরফুরে মেজাজে কাজ করতে পারেন। এ ছাড়া ‘সেল্ফ কেয়ার’ বা আত্মযত্ন দুশ্চিন্তা আর উদ্বেগ কমায়। কাজে মনোযোগ বাড়ায়। হতাশা, রাগ—এই ধরনের মানসিক অবস্থার সঙ্গে মোকাবিলা করতে সাহায্য করে। প্রশান্তি বাড়ায়।
শরীরের যত্ন নিতে যে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
আপনার সুস্বাস্থ্য (Healthy lifestyle) কীভাবে বজায় রাখবেন তার সঠিক পদ্ধতি বেছে নেওয়া জরুরি। সেটা আদর্শগতভাবে আত্ম-আবিষ্কার এবং শেখার যাত্রা হওয়া উচিত। পড়ুন এবং দেখুন কোনটি আপনার জন্য কার্যকরী।
শরীরচর্চা
নিয়মিত শরীরচর্চা বার্ধক্য ঠেকাতে পারে। এটি দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে, রক্তচাপ স্বাভাবিক করে, চর্বিহীন পেশী উন্নত করে, কোলেস্টেরল কমা এং হাড়ের ঘনত্ব উন্নত করে।
আপনার বাড়ির চারপাশে জগিং করুন, বাড়ির বা প্রতিবেশীর বাচ্চাদের সঙ্গে পার্কে হাঁটুন, লাফ দড়ির অভ্যাস করুন বা খেলাধুলো করুন, হাইকিং পছন্দ হলে সেটা ও করতে পারেন।
সুস্থ শরীরের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার
সারাদিনে অন্তত পাঁচটি সবজি আপনার খাদ্য তালিকায় রাখুন। সেগুলি আপনি আপনার পছন্দমতো, কাঁচা, সেদ্ধ বা ভাজা করে খেতে পারেন।
ডায়েটে শাকসবজির পরিমাণ বেশি হলে তা ফুসফুস, কোলন, স্তন, জরায়ু, খাদ্যনালী, পাকস্থলী, মূত্রাশয়, অগ্ন্যাশয় এবং ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমায়। সঠিক খাবার আপনার ওজন ঠিক রাখবে, লক্ষ্যে স্থির রাখবে এবং লালসা এড়াতে সাহায্য করবে।
আপনার খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিন ঠান্ডা পানীয়, ক্যান্ডি, চিপসের মতো প্রক্রিয়াজাত খাবার। কারণ এগুলো শরীরে পুষ্টি জোগায় না, বরং শরীরে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ক্যালোরি পৌঁছে দেয়।
চা এবং কপির আকারে আপনি কতটা ক্যাফাইন গ্রহণ করছেন সেদিকে খেয়াল রাখুন। প্রতিদিন দু’কাপের বেশি খেলে তা আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। যার ফলে অনিদ্রার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
বই পড়া
যত জ্ঞানের পরিধি বাড়বে, ততই বাড়বে আত্মবিশ্বাস। তাই নিজেকে যত্ন করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, বই, ম্যাগাজিন, গুগল সার্চে প্রতিদিনই কিছু না কিছু নতুন শেখা।
পর্যাপ্ত পানি পান করুন
শরীরের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে পর্যাপ্ত জল খাওয়া খুবই প্রয়োজন। জল ডিটক্সিফাই করে, হজমে সাহায্য করে, কেমোথেরাপির ফলাফলে সাহায্য করে, প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, পেশীকে শক্তি জোগায় এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
আপনি কাজ করার সময় ডেস্কের পাশে এবং ঘুমাতে যাওয়ার সময় বিছানার পাশে জলের বোতল অবশ্যই রাখুন। এটি আপনাকে আরও জল খাওয়ার কথা মনে করিয়ে দেবে।
আপনি আপনার ডায়েটে ডাবের জল এবং তাজা ফলের রসও অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
ধ্যান / মেডিটেশন
মেডিটেশন বা ধ্যানের সুদূরপ্রসারী এবং দীর্ঘস্থায়ী উপকারিতা রয়েছে। এটি মানসিক চাপ কমায়, আমাদের আরও ভালোভাবে সংযোগ স্থাপন করতে দেয়, লক্ষ্যে স্থির রাখে এবং ব্যথা দূর করে।
পর্যাপ্ত অনুশীলন, মননশীলতা, মস্তিষ্ককে স্থির রাখা এবং নিজের প্রতি সদয় হওয়া জীবনের অভ্যাসে পরিণত হতে পারে।
নিয়মিত ডাক্তারের কাছে যান
আপনি পুরোপুরি সুস্থ বোধ করলেও আপনার শরীর সুস্থ আছে তো? নিজের জন্য সময় বের করে অবশ্যই পরীক্ষা করে দেখুন।
এটি যে কোনও রোগের প্রাথমিক সনাক্তকরণ এবং প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে, পাশাপাশি ডাক্তারের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করতে সাহায্য করে, আপনার স্বাস্থ্যের ঝুঁকি কম করে, আপনার শরীরকে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং এটি এমন একটা জিনিস যা আপনাকে ভালো ঘুমাতে সাহায্য করতে পারে।
আপনার ক্যান্সার সহ অন্য কোনও রোগের ঝুঁকি রয়েছে কিনা তা খুঁজে বের করুন। স্থূলতা, ধূমপান, নিয়মিত অ্যালকোহল পান ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। নিয়মিত চিকিৎসা করান, যে কোনও তাহলে রোগ প্রথম দিকেই সনাক্তকরণ সহজ হবে এবং তাতে আপনার দ্রুত আরোগ্য লাভের সুযোগ থাকবে।
শরীরের সঠিক ওজন বজায় রাখুন
যদিও সকলের শরীরের আকার, আয়তন, ওজন এক নয়, তবে আপনার শরীরের ওজন ঠিক আছে কিনা জানার সহজ উপায় হল বডি মাস ইনডেক্স (body mass index)। 18.5 এবং 22.9 রেঞ্জের মধ্যে BMI হল আদর্শ।
ওজন কমানোর অনেক উপায় রয়েছে, তবে কোনওটি আপনার জন্য সঠিক সেটা বেছে নেওয়া জরুরি। প্রয়োজনে আপনি কোনও ভালো ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিতে পারেন। এই বিষয়ে কোনওরকম সন্দেহ থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
ছোটো ছোটো লক্ষ্য তৈরি করুন
সুস্বাস্থ্য গড়ে তোলা একদিনে সম্ভব নয়। তাই প্রথমে ছোটো ছোটো লক্ষ্য তৈরি করুন এং সেই লক্ষ্যে স্থির থাকুন। অপ্রয়োজনীয় অভ্যাসকে একটি স্বাস্থ্যকর ইতিবাচক অভ্যাসে পরিণত করুন। এক গ্লাস ঠান্ডা পানীয় বদলে বেছে নিন দুই গ্লাস জল। ছোটো ছোটো লক্ষ্যগুলোই একদিন আপনাকে বড় লক্ষ্য জয় করতে সাহায্য করবে।
এই বিষয়গুলি ট্র্যাক করতে আপনার পরিবারের কেউ বা কোনও বন্ধুর সাহায্য নিতে পারেন। তাছাড়াও আপনি কোনও জার্নাল, ফিটনেস অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন বা আপনার মোবাইল ফোনটিও রিমাইন্ডার দেওয়ার কাজে লাগাতে পারেন।
রাতে পর্যাপ্ত ঘুম
ঘুম যে অত্যন্ত জরুরি সেকথা কারও অজানা নয়। জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে মানুষের ঘুমের চাহিদা ভিন্ন। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য সারারাতের একটানা সাত থেকে নয় ঘণ্টার ঘুমকে পর্যাপ্ত বলা যায়।
শুধু ঘণ্টার সংখ্যা নয়, ঘুমের মানও গুরুত্বপূর্ণ। রাতের ঘুমটা হতে হবে একটানা গভীর ঘুম। আর দুদিন ভালো ঘুমালেন তো একদিন এলোমেলো হয়ে গেল, এমনটা চলবে না। ঘুমের নিয়মটা হতে হবে প্রতিদিন একই রকম।
বিশ্রাম এবং মেডিটেশন, ঘুমানোর আগে এক গ্লাস উষ্ণ দুধ আপনাকে রাতে ভালো ঘুমাতে সাহায্য করতে পারে।
ঘুমাতে যাওয়ার ঠিক আগেই খাবার খাবেন না, শোবার ঘর অন্ধকার রাখুন এবং সমস্ত স্ট্রেস ঝেড়ে ফেলে ঘুমাতে যান। অপ্রয়োজনীয় বিভ্রান্তি থেকে নিজেকে দূরে রাখাই ভালো।
অ্যালকোহল পান করবেন না
অ্যালকোহল শরীরে টক্সিনের পরিমান বাড়িয়ে দেয়, হৃহপিণ্ড এবং ফুসফুসের গতি অনিয়মিত করে তোলে, মস্তিষ্ক নিজেকে ত্বরান্বিত করে এবং লিভার এটিকে বিপাক করার চেষ্টা করে ওভারড্রাইভ করে।
এগুলি ছাড়াও আরও খারাপ দিক রয়েছে যা মানসিক স্বাস্থ্য, শরীরের ওজন, ঘুমের ওপর প্রভাব ফেলে। অ্যালকোহল শরীরে ক্যান্সার সহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
টোব্যাকো বা তামাকজাতীয় জিনিস থেকে দূরে থাকুন
ধূমপান বন্ধ করা কঠিন ঠিকই, কিন্তু আপনি একবার নিজেকে প্রশ্ন করুন তো, আপনি কী নিজের থেকে এটিকে বেশি ভালোবাসেন? নিশ্চয় নয়! ধূমপান হল ক্যান্সারের অন্যতম কারণ যা চাইলে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। পুরুষদের মধ্যে ক্যান্সারের 50% ধূমপানের সঙ্গে সম্পর্কিত।
ঘরে রান্না করুন এবং বাইরের খাবার এড়িয়ে চলুন
আজকাল আমরা সকলেই খুব ব্যস্ত। তাই চেষ্টা করুন সহজ সিম্পল খাবার রান্না করে খেতে। তাতে সময়ও বাঁচবে আবার শরীরের জন্য উপকারীও হবে। প্রয়োজনে ছুটির দিনে একবার বসে সপ্তাহের খাবার মেনু ঠিক করে নিন, তাতে আপনার সুবিধে হবে। পূর্ব পরিকল্পনা আপনাকে অতিরিক্ত ফ্যাট, চিনি এবং নুনযুক্ত খাবার এড়াতে সাহায্য করবে এবং আপনাকে অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর রাখে।
স্বাস্থ্যকর স্ন্যাক্স খান
আমরা অনেকেই জানি, যে স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং ট্র্যান্স ফ্যাট উভয়ই আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকারক।
আপনি খাদ্য তালিকায় অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার রাখতে পারেন। যা কার্ডিওভাসকুলার রোগ এবং দীর্ঘস্থায়ী অসু্স্থতার ঝুঁকি কমাতে পারে। দুধ, ডিম এবং পনির থেকেও ওমেগা-3 পেতে পারেন।
নিজের দাঁতের কথা ভুলবেন না
আপনার মুখের স্বাস্থ্য ও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মুখকে অবহেলা করলে দাঁতের সমস্যা এবং মাড়ির রোগ যেমন প্রদাহ এবং প্লাক তৈরি হতে পারে।
পরীক্ষায় দেখা গেছে, যে দাঁতের সুস্বাস্থ্য হৃদরোগ, নিউমোনিয়া, অস্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থা, অ্যালজাইমার এবং ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের ঝুঁকি কমায়।
আপনার মুখের মধ্যে কোনও অস্বাভাবিক চিহ্ন, আলসার বা ক্ষত রয়েছে কিনা দেখুন। সেক্ষেত্রে ডেন্টিস্ট বা সাধারণ চিকিৎসকের সঙ্গে তাড়াতাড়ি পরামর্শ করুন।
যাঁরা ধূমপান করেন, তারা নিয়মিত দাঁতের পরীক্ষা করান। তামাক শুধুমাত্র আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্যই নয়, আপনার দাঁত ও মাড়ির জন্যও খুব ক্ষতিকারক।
মাঝেমধ্যেই বাইরে যান এবং স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের সাথে মেলামেশা করুন
আপনি যদি ডেস্কে কাজ করেন, তাহলে আপনার জীবনধারায় পরিবর্তন করার সময় এসেছে। কারণ পেশীগুলিকে নড়াচড়া করতে এবং নমনীয় করতে একটানা কাজ না করে মাঝেমধ্যে বিরতি নিন এবং চলাফেরা করুন।
অফিসের কাজের পর প্রয়োজনে জিম জয়েন করুন, বাচ্চাদের বা প্রিয় পোষ্যকে নিয়ে পার্কে বেড়াতে যান। প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলুন, সহকর্মীদের সঙ্গে খাওয়াদাওয়া করুন।
তোমার মধ্যে আমি কে জানতে চেষ্টা কর।এক্সটার্নাল ফ্যাক্টর এর উপর বেইজ করে নিজেকে ডিফাইন করার চেষ্টা থেকে সরে আসতে পারো। তোমার বাহ্যিক সৌন্দর্য তোমার পারিপার্শ্বিকতা কে যতটা প্রভাবিত করে,তোমার সুন্দর চিন্তা,ভিশন তার থেকে অনেক গুন বেশি প্রভাবিত করে।