বাচ্চাদের কত বছর বয়স কৃমির ঔষধ খাওয়ানো যায়

 বাচ্চাদের কত বছর বয়স কৃমির ঔষধ খাওয়ানো যায় কৃমি আমাদের শরিরে পরজিবি হিসেবে বাস করে। এমন কোন মানুষ নেই যে, যার শরীরে কৃমি নাই। ছোট বাচ্ছা থেকে পূর্ন: বয়ষ্ক সকলেরই কৃমির সমস্যা রয়েছে। তবে কৃমি হলে সহজে বোঝা যায় না যে কার শরীরে কৃমি আছে না নাই। তবে কিছু লক্ষন দেখে বোঝা যায়, তার শরীরে কৃমি আছে। তাই আপনার বাচ্চার কৃমি আছে কি না তা কিছু লক্ষন দেখে বুঝে। তাকে কৃমির ট্যাবলেট খাওয়াতে হবে।

বাচ্চাদের কত বছর বয়স কৃমির ঔষধ খাওয়ানো যায়


আমাদের দেশে দেখা যায় শতকারা ১০০ জনের মধ্যে ৮০ জন কৃমিতে আক্রন্ত। তবে এই আক্রান্তের হার শিশুদের ক্ষেত্রে অনেক বেশি। ছোট শিশুরা বেশিরভাগ থ্রেডওয়ার্ম দ্বারা সংক্রামিত হয়, এছাড়াও হুকওয়ার্ম, রাউন্ডওয়ার্ম, হুইপওয়ার্ম আমাদের দেশে সাধারণ। আসুন জেনে নিই কৃমি সংক্রমণের লক্ষণগুলো কী কী।

বাচ্চাদের কৃমি হওয়ার লক্ষণ?

  • ওজন কমানো
  • হালকা পেটে ব্যথা
  • বমি বমি ভাব
  • বিরক্তি বেড়ে যায়
  • বমি বা কাশি
  • মলদ্বারে চুলকানি
  • চুলকানির কারণে ঘুম নষ্ট হওয়া
  • মলের সাথে রক্ত যাওয়া
  • মূত্রনালীর সংক্রমণ, মূত্রনালীর অসংযম এবং মেয়েদের প্রস্রাবের সময় ব্যথা।
  • অন্ত্রের আলসার এবং রক্তাল্পতা থেকে রক্তপাত
  • ক্ষুধা হ্রাস, ক্ষুধা হ্রাস
  • বদহজমের কারণে ডায়রিয়া
  • পিকা বা ভোজ্য নয় এমন জিনিস খাওয়ার ইচ্ছা (যেমন মাটি)।

কৃমির কারণে কি কি সমস্যা হয়?

অন্ত্রে কৃমি বৃদ্ধির কারণে পায়খানায় বাধা বা পায়খানার পথ বন্ধ হয়ে যাওয়া।
গলব্লাডার বা লিভারে চলে যাওয়া কৃমির কারণে সংক্রমণ বা প্রদাহ সৃষ্টি হওয়া।
কৃমি ও  খিঁচুনি হতে পারে।

তবে কৃমির সংক্রমন যত বেশি হয় তত বেশি লক্ষন বেশি প্রকাশ পায়। সংক্রমন কম হলে লক্ষন গুলো কম প্রকাশ পায়। আবার অনেক সময় বোঝাই যায় না। 

বাচ্চাদের কৃমিতে আক্রান্ত হওয়ার কারন?

দূষিত মাটি ও পানির কারনে মানুষ বেশি  কৃমিতে  আক্রান্ত হয়। এছাড়া শাকসবজি, মাছ, মাংস না ধুয়ে খেলে বা আধা রান্না করা খাবার খেলে কৃমির সংক্রমণ হতে পারে। কৃমির ডিম বা লার্ভা সাধারণত মাটি বা পানি থেকে শিশু বা প্রাপ্তবয়স্কদের হাত বা পায়ে লেগে থাকে। কখনও কখনও এই লার্ভাগুলি হাত থেকে মুখের মাধ্যমে অন্ত্রে যায়। কিছু ক্ষেত্রে এই লার্ভা ত্বকে প্রবেশ করে এবং শরীরে প্রবেশ করে।

কি ভাবে কৃমির সংক্রামণ রোধে করা যায়?

  • নখ বেশিবড় রাখা যাবে না
  • বাড়ির গৃহকর্মীর পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করুন
  • 2-3 দিন পর জীবাণুনাশক দিয়ে ঘরের মেঝে পরিষ্কার করুন
  • শিশুকে খালি পায়ে না রাখাই ভালো
  • শিশুদের আবর্জনা পরিহার করা এবং খেলাধুলা করা উচিত
  • খালি মাটিতে খেলা এড়িয়ে চলুন
  • খাবারের আগে এবং টয়লেট ব্যবহারের পরে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন
  • পানি ফুটিয়ে বা ফিল্টার করে ব্যবহার করুন

কৃমির ঔষধ খাওয়ার আগে অবশ্যই আপনার বাচ্চার বয়স ১ বছর হতে হবে। এর কম হলে হবে না। তবে এর পরে প্রতি ৬ মাস পর পর কৃমির ট্যাবলেট খাওয়াতে হবে। তবে মনে রাখবেন কৃমির ঔষধ শুধুমাত্র কৃমি মারতে পারে কিন্তু লার্ভা মারতে পারে না। তাই ট্যাবলেটের ডোজ অনুযায়ী খেতে হবে। প্রথম ডোজ এর পর ৭-১০ দিন পরে আবার দ্বীতিয় ডোজ খেতে হবে। তাই বাচ্চাকে প্রতি ৬ মাস পর পর কৃমির ট্যাবলেট খাওয়াতে হবে। তবে শুধু বাচ্চাকে খাওয়ালে হবে না। পরিবারের সকলের এক সাথে খেতে হবে। 

কৃমির ওষুধ কত দিন পর খেতে হবে?

  • জাতীয় টিকা দিবসে 2-5 বছর বয়সী সকল শিশুকে কৃমি ট্যাবলেট খাওয়ানো উচিত।
  • প্রতি ৪-৬ মাস অন্তর কৃমির ওষুধ দিলে শিশু কৃমির সংক্রমণ কমে যাবে। কৃমি শরীরের বড় শত্রু, কোনো অবস্থাতেই পেটে একটি কৃমি রাখা যাবে না।

কৃমির ওষুধ কখন খাওয়াবেন?

কৃমিনাশকের জন্য একটি প্রেসক্রিপশন লেখার পর বাবা-মায়ের মনে একগুচ্ছ প্রশ্ন আসতে পারে।

যেমনঃ . ১/ গরমে না ঠান্ডার দিনে খাওয়া ঠিক?

২/ দিনে না রাতে কখন খাওয়া ভাল? 

৩/ খাবার আগে নাকি পরে খাওয়া ভালে? 

বাজারে উপলব্ধ সমস্ত অ্যান্থেলমিন্টিক ওষুধ নিরাপদ এবং বছরের যে কোনও সময় প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী দেওয়া যেতে পারে। বৃষ্টির দিনের অপেক্ষায় বসে থাকার দরকার নেই। খালি পেট, ভরা পেটের হিসেব করতে হয় না। ওষুধ খাওয়ানোর পর শিশুকে মল দিয়ে যাওয়ার জন্য গ্লিসারিন স্টিক বা কোনো ওষুধ দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

খাদ্যের সাথে কৃমির সম্পর্ক?

অনেক সময় শোনা যায় খুব বেশি মিষ্টি, কলা বা মাছ খেলে পেটে কৃমি হয়ে থাকে। আবার অনেকে স্থানভেদে আরও কিছু খাবারের নামও বলে থাকেন যার ফলে কৃমি হতে পারে। আসলে আমরা জানি যে, মলের মাধ্যমে কৃমির সংক্রমণ ঘটে। কৃমির ডিম বা লার্ভা মানুষের মল থেকে বেরিয়ে অন্যের শরীরে যায়। 

পরবর্তীতে বলা যায় ভালোভাবে হাত না ধোয়া হলে কৃমির ডিম আঙুলের নখে, আঙুলের খাঁজে লেগে থাকা অবস্থায় বা অপরিষ্কার শাকসবজি, ফলমূল ইত্যাদির মাধ্যমে মুখে প্রবেশ করে। কিন্তু অপরিষ্কার খাবারের সঙ্গে কৃমির সম্পর্ক রয়েছে। 

যেমন, খোলা বাজারের চকলেট, লজেঞ্জ বা মিষ্টি ইত্যাদি এসব খাবারের ওপর মাছি বসে, ফলে খোলা অপরিষ্কার খাবারের সঙ্গে কৃমির ডিম বা লার্ভা শরীরে প্রবেশ করে।
 

বাচ্চাদের কৃমির ওষুধের নাম


অ্যালবেনডাজোল : 

দুই বছরের বেশি বয়সী শিশুদের জন্য 400 মি. গ্রাম ১ ডোজ (2 চা চামচ সিরাপ)। 1-2 বছরের শিশুর জন্য অর্ধেক ডোজ। এর পরও যদি সংক্রমণ থেকে যায় বলে মনে হয় তবে 3 সপ্তাহ পরে আরও এটি খাওয়ানো যেতে পারে। 

মেবেনডাজোল : 

মেবেনডাজোল ট্যাবলেটটি বাজারে সহজেই পাওয়া যায়। ট্যাবলেটটি বাচ্চাদের সিরাপ হিসেবে খাওয়ানো যায়। এটি খাওয়াতে হবে ২ বছরের বাচ্চাকে ১ চামচ করে ২ বার করে পরপর ৩ দিন।


লিভোমিসোল : 

বাজারে কেটেক্স নামে পাওয়া যায়। এর ডোজটি প্রতি কেজি ওজনের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ৩ মি. গ্রাম ১ মাত্রার ডোজ। 

বলেছেনঃ
সহযোগী অধ্যাপক, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল

সম্পর্কিত প্রশ্নাবলী

বাচ্চাদের কৃমি হওয়ার লক্ষণ?

ওজন কমানো হালকা পেটে ব্যথা বমি বমি ভাব বিরক্তি বেড়ে যায় বমি বা কাশি মলদ্বারে চুলকানি চুলকানির কারণে ঘুম নষ্ট হওয়া মলের সাথে রক্ত যাওয়া মূত্রনালীর সংক্রমণ, মূত্রনালীর অসংযম এবং মেয়েদের প্রস্রাবের সময় ব্যথা। অন্ত্রের আলসার এবং রক্তাল্পতা থেকে রক্তপাত ক্ষুধা হ্রাস, ক্ষুধা হ্রাস বদহজমের কারণে ডায়রিয়া পিকা বা ভোজ্য নয় এমন জিনিস খাওয়ার ইচ্ছা (যেমন মাটি)।

বাচ্চাদের কৃমিতে আক্রান্ত হওয়ার কারন?

দূষিত মাটি ও পানির কারনে মানুষ বেশি কৃমিতে আক্রান্ত হয়। এছাড়া শাকসবজি, মাছ, মাংস না ধুয়ে খেলে বা আধা রান্না করা খাবার খেলে কৃমির সংক্রমণ হতে পারে। কৃমির ডিম বা লার্ভা সাধারণত মাটি বা পানি থেকে শিশু বা প্রাপ্তবয়স্কদের হাত বা পায়ে লেগে থাকে। কখনও কখনও এই লার্ভাগুলি হাত থেকে মুখের মাধ্যমে অন্ত্রে যায়। কিছু ক্ষেত্রে এই লার্ভা ত্বকে প্রবেশ করে এবং শরীরে প্রবেশ করে।

বাচ্চাদের কৃমির ওষুধের নাম ?

 অ্যালবেনডাজোল : দুই বছরের বেশি বয়সী শিশুদের জন্য 400 মি. গ্রাম ১ ডোজ (2 চা চামচ সিরাপ)। 1-2 বছরের শিশুর জন্য অর্ধেক ডোজ। এর পরও যদি সংক্রমণ থেকে যায় বলে মনে হয় তবে 3 সপ্তাহ পরে আরও এটি খাওয়ানো যেতে পারে। মেবেনডাজোল : মেবেনডাজোল ট্যাবলেটটি বাজারে সহজেই পাওয়া যায়। ট্যাবলেটটি বাচ্চাদের সিরাপ হিসেবে খাওয়ানো যায়। এটি খাওয়াতে হবে ২ বছরের বাচ্চাকে ১ চামচ করে ২ বার করে পরপর ৩ দিন। লিভোমিসোল : বাজারে কেটেক্স নামে পাওয়া যায়। এর ডোজটি প্রতি কেজি ওজনের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ৩ মি. গ্রাম ১ মাত্রার ডোজ।

Next Post Previous Post