ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা

 ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা ,ডায়াবেটিস একটি বিপাকীয় রোগ যা মানুষের রক্তে শর্করার মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করে তোলে । এই রোগের ভয়াবহতা অনেক বেশি। ডায়াবেটিস একটি নিরব ঘাতক রোগ।  ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে  তা হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি রোগ, অন্ধত্ব এবং অন্যান্য গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার বা জটিল রোগের  কারণ হতে পারে।


ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা


ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডায়াবেটিস রোগীদের কিছু খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। যেসব খাবার রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি করতে পারে।


ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা  

ডায়াবেটিসের লক্ষণ:


ডায়াবেটিস এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ রয়েছে যে গুলি দেখে বুঝতে হবে যে, ডায়াবেটিস এর মত জটিল রোগ আপনার শরীরে বাসা বেধেছে। চলুন লক্ষণ গুলি সম্পর্কে জেনে নিন।

প্রধান লক্ষণ:

অতিরিক্ত তৃষ্ণা পাওয়া : ডায়াবেটিস রোগীরা প্রায়শই তীব্র তৃষ্ণার্ত বোধ করেন এবং অতিরিক্ত পানি পান করেন।

ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া : ডায়াবেটিস রোগীরা প্রায়শই ঘন ঘন প্রস্রাব করেন, বিশেষ করে রাতের বেলা।

অতিরিক্ত ক্ষুধা পাওয়া : ডায়াবেটিস রোগীরা প্রায়শই অতিরিক্ত ক্ষুধার্ত বোধ করেন এবং অতিরিক্ত খাবার খান।

ওজন হ্রাস পাওয়া : ডায়াবেটিস রোগীরা প্রায়শই কারণ ছাড়াই ওজন হ্রাস করে।

অন্যান্য লক্ষণ:

ক্লান্তি: ডায়াবেটিস রোগীরা প্রায়শই ক্লান্তি এবং দুর্বলতা অনুভব করেন।

ঝাপসা দৃষ্টি: ডায়াবেটিস রোগীরা প্রায়শই ঝাপসা দৃষ্টি অনুভব করেন।

ধীর ক্ষত নিরাময়: ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষত নিরাময় হতে দীর্ঘ সময় লাগে।

চোখ, মাড়ি, এবং ত্বকের সংক্রমণ: ডায়াবেটিস রোগীদের চোখ, মাড়ি, এবং ত্বকের সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

হাত-পায়ে অসাড়তা বা শিহরণ: ডায়াবেটিস রোগীদের হাত-পায়ে অসাড়তা বা শিহরণ অনুভব হতে পারে।

যদি আপনার এই লক্ষণগুলির মধ্যে কোন একটি থাকে, তাহলে দ্রুত একজন ডাক্তারের সাথে দেখা করুন এবং পরামর্শ গ্রহণ করুন ।

ডায়াবেটিসের ধরন কত প্রকার 

টাইপ 1 ডায়াবেটিস: এটি একটি অটোইমিউন রোগ যেখানে শরীরের ইনসুলিন তৈরি করার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।

টাইপ 2 ডায়াবেটিস: এটি ডায়াবেটিসের সবচেয়ে সাধারণ ধরন। এটি হয় যখন শরীর ইনসুলিনের প্রতি প্রতিরোধী হয়ে ওঠে বা যখন শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি করে না।

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস: এটি গর্ভাবস্থায় দেখা দেয় এবং গর্ভাবস্থার পরে তা এমনিতেই সেরে যেতে পারে।

ডায়াবেটিসের চিকিৎসা:

জীবনধারা পরিবর্তন:

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডায়াবেটিস রোগীদের যা করা উচিত:

ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া: ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করা: চর্বি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে বাধা সৃষ্টি করে।

চিনিযুক্ত পানীয় পরিহার করা: চিনিযুক্ত পানীয় রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়ায়।

নিয়মিত ব্যায়াম: নিয়মিত ব্যায়াম রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং ডায়াবেটিসের জটিলতা প্রতিরোধ করে। ডায়াবেটিস রোগীদের প্রতিদিন কমপক্ষে 30 মিনিট ব্যায়াম করা উচিত।

ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। ডায়াবেটিস রোগীদের তাদের স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা উচিত।

ওষুধ:


ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য ডাক্তার ওষুধ দিতে পারেন। ডায়াবেটিসের জন্য বিভিন্ন ধরনের ওষুধ আছে। ডাক্তার আপনার জন্য সঠিক ওষুধ নির্বাচন করবেন।


ইনসুলিন:


টাইপ 1 ডায়াবেটিস রোগীদের ইনসুলিন থেরাপি প্রয়োজন। ইনসুলিন রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ইনসুলিন বিভিন্ন উপায়ে দেওয়া যেতে পারে, যেমন:

ইনজেকশন: ইনসুলিনের সবচেয়ে সাধারণ উপায় হল ইনজেকশন।

ইনসুলিন পাম্প: ইনসুলিন পাম্প একটি ছোট ডিভাইস যা দিনের বেলায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইনসুলিন সরবরাহ করে।

ইনহেলেড ইনসুলিন: ইনহেলেড ইনসুলিন একটি পাউডার ফর্ম যা একটি ডিভাইসের মাধ্যমে ফুসফুসে প্রদান করা হয়।

ডায়াবেটিস রোগীর জন্য নিষিদ্ধ খাবার তালিকা

চিনিযুক্ত পানীয়: কোলা, স্প্রাইট, ফ্যান্টা, লেবু পানীয়, শক্তি পানীয়, ফলের রস ইত্যাদি।

মিষ্টি খাবার: চকোলেট, কেক, বিস্কুট, পেস্ট্রি, আইসক্রিম, মিষ্টি, রসগোল্লা ইত্যাদি।

সাদা ভাত: সাদা ভাতে ফাইবার কম থাকে এবং এটি রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি করতে পারে।

সাদা রুটি: সাদা রুটিতে ফাইবার কম থাকে এবং এটি রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি করতে পারে।

ফাস্ট ফুড: ফাস্ট ফুডে চর্বি, ক্যালোরি এবং সোডিয়াম বেশি থাকে এবং এটি রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি করতে পারে।

ভাজা খাবার: ভাজা খাবারে চর্বি বেশি থাকে এবং এটি রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি করতে পারে।

লাল মাংস: লাল মাংসে চর্বি বেশি থাকে এবং এটি রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি করতে পারে।

প্রক্রিয়াজাত খাবার: প্রক্রিয়াজাত খাবারে চিনি, লবণ এবং অস্বাস্থ্যকর চর্বি বেশি থাকে এবং এটি রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি করতে পারে।

অ্যালকোহল: অ্যালকোহল রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণকে ব্যাহত করতে পারে।

ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ভালো খাবার গুলি কি?

ফল: আপেল, কলা, কমলালেবু, নাশপাতি, আঙ্গুর, বেরি ইত্যাদি।

সবজি: পালং শাক, লাউ শাক, ব্রোকলি, গাজর, বিট, শসা, টমেটো ইত্যাদি।

সম্পূর্ণ শস্য: বাদামী ভাত, ওটমিল, quinoa, বাদামী রুটি, multigrain রুটি ইত্যাদি।

ডাল: মুগ ডাল, মসুর ডাল, ছোলা ইত্যাদি।

মাছ: রুই, কাতলা, ইলিশ, চিংড়ি ইত্যাদি।

সাদা মাংস: মুরগির মাংস, খাসির মাংস ইত্যাদি।

ডিম: ডিমের সাদা অং

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য খাদ্য তালিকা


সকালের নাস্তা:

  • ওটমিল দুধ ও বাদাম দিয়ে
  • ডিমের সাদা অংশের অমলেট
  • ফলের সালাদ

দুপুরের খাবার:

  • বাদামী ভাত
  • ডাল
  • সবজি
  • মাছ

বিকেলের নাস্তা:

  • বাদাম
  • দই
  • ফল

রাতের খাবার:

  • বাদামী রুটি
  • সবজি
  • মুরগির মাংস

ডায়াবেটিস রোগীর খাবার সম্পর্কে পরামর্শ

  • খাবার নিয়মিত খান।
  • প্রতিটি খাবারে ফাইবার, প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি অন্তর্ভুক্ত করুন।
  • অতিরিক্ত খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
  • ধীরে ধীরে এবং ভালোভাবে চিবিয়ে খান।
  • খাবারের সময় পানি পান করুন।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
  • ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খান।

ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ডায়েট চার্ট

ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ডায়েট চার্ট তৈরি করার সময়, রোগীর বয়স, লিঙ্গ, ওজন, শারীরিক কর্মকাণ্ডের মাত্রা, ডায়াবেটিসের ধরন এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যাগুলি বিবেচনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
একজন ডাক্তার বা পুষ্টিবিদ ডায়াবেটিস রোগীর জন্য একটি ব্যক্তিগত ডায়েট চার্ট তৈরি করতে সহায়তা করতে পারেন।

ডায়াবেটিস খাদ্য চার্ট তৈরির নীতি:

ক্যালোরি: ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য প্রতিদিন কত ক্যালোরি প্রয়োজন তা তাদের বয়স, লিঙ্গ, ওজন, শারীরিক কর্মকাণ্ডের মাত্রা এবং ডায়াবেটিসের ধরনের উপর নির্ভর করে।

কার্বোহাইড্রেট: কার্বোহাইড্রেট রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য প্রতিদিন কত কার্বোহাইড্রেট প্রয়োজন তা তাদের ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণের উপর নির্ভর করে।

প্রোটিন: প্রোটিন রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ডায়াবেটিস রোগীদের প্রতিদিন তাদের শরীরের ওজনের প্রতি কেজিতে 0.8-1 গ্রাম প্রোটিন খাওয়া উচিত।

চর্বি: চর্বি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ডায়াবেটিস রোগীদের প্রতিদিন তাদের মোট ক্যালোরির 20-30% চর্বি থেকে আসা উচিত।

ফাইবার: ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ডায়াবেটিস রোগীদের প্রতিদিন 25-30 গ্রাম ফাইবার খাওয়া উচিত।

ভিটামিন এবং খনিজ: ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভিটামিন এবং খনিজ গুরুত্বপূর্ণ।

ডায়াবেটিস খাদ্য চার্টের উদাহরণ:

সকালের নাস্তা:

  • ওটমিল দুধ ও বাদাম দিয়ে (200 ক্যালোরি)
  • ডিমের সাদা অংশের অমলেট (150 ক্যালোরি)
  • ফলের সালাদ (100 ক্যালোরি)

দুপুরের খাবার:

  • বাদামী ভাত (200 ক্যালোরি)
  • ডাল (150 ক্যালোরি)
  • সবজি (100 ক্যালোরি)
  • মাছ (150 ক্যালোরি)

বিকেলের নাস্তা:

  • বাদাম (100 ক্যালোরি)
  • দই (100 ক্যালোরি)
  • ফল (100 ক্যালোরি)

রাতের খাবার:

বাদামী রুটি (২ টি): 160 ক্যালোরি

সবজি (পালং শাক, লাউ শাক, ব্রোকলি, গাজর, বিট, শসা, টমেটো ইত্যাদি): 100 ক্যালোরি

মুরগির মাংস (ভাজা বা সেদ্ধ): 150 ক্যালোরি

দই: 100 ক্যালোরি

মোট: 510 ক্যালোরি

ওটমিল (দুধ ও বাদাম দিয়ে): 200 ক্যালোরি

ডিমের সাদা অংশের অমলেট: 150 ক্যালোরি

সবজির সালাদ: 100 ক্যালোরি

ফল: 100 ক্যালোরি

মোট: 550 ক্যালোরি

মাছের ঝোল (বাদামী ভাতের সাথে): 300 ক্যালোরি

সবজি: 100 ক্যালোরি

ফল: 100 ক্যালোরি

মোট: 500 ক্যালোরি

কিছু সাধারণ ডায়েট চার্ট টিপস:

  • প্রতিদিন 1500-2000 ক্যালোরি গ্রহণ করুন।
  • প্রতিদিন 25-30 গ্রাম ফাইবার গ্রহণ করুন।
  • প্রতিদিন 15-20 গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করুন।
  • প্রতিদিন 20-30 গ্রাম চর্বি গ্রহণ করুন।
  • স্যাচুরেটেড ফ্যাট, ট্রান্স ফ্যাট এবং কোলেস্টেরল গ্রহণ সীমিত করুন।
  • সোডিয়াম গ্রহণ সীমিত করুন।

ডায়াবেটিস রোগীর জন্য খাবার সম্পর্কে পরামর্শ:

  • খাবার সম্পর্কে আপনার ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের সাথে কথা বলুন।
  • আপনার জন্য কোন খাবারগুলি ভালো এবং কোন খাবারগুলি এড়িয়ে চলতে হবে তা জানুন।
  • একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
  • ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খান।

ডায়াবেটিসের জটিলতা:


ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে তা হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি রোগ, অন্ধত্ব এবং অন্যান্য গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে।


ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিয়মিত ডাক্তারের সাথে দেখা করা গুরুত্বপূর্ণ। ডাক্তার আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং জটিলতা দুর  করতে সাহায্য করতে পারেন।

শেষ কথা

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ, তবে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনধারার মাধ্যমে এটি সম্ভব। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিষিদ্ধ খাবার তালিকা সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং বিকল্প খাবার বেছে নেওয়া রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে সাহায্য করবে।


Next Post Previous Post