অবিবাহিত মেয়েদের মাসিক বন্ধ হওয়ার কারণ

 অবিবাহিত মেয়েদের মাসিক বন্ধ হওয়ার কারণ মাসিক বা ঋতুচক্র হলো একজন নারীর প্রজনন জীবনের একটি স্বাভাবিক অংশ। 

অবিবাহিত মেয়েদের মাসিক বন্ধ হওয়ার কারণ


Images credit by: fotor


প্রতি মাসে জরায়ুর গর্ভাশয়ের অভ্যন্তরীণ আস্তরণ (এন্ডোমেট্রিয়াম) ফুলে উঠে এবং গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুত হয়। গর্ভধারণ না হলে, এই আস্তরণটি ভেঙে রক্তপাতের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে আসে। এই প্রক্রিয়াটি সাধারণত 2 থেকে 7 দিন স্থায়ী হয়। অবিবাহিত মেয়েদের মাসিক বন্ধ হওয়ার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে।


অবিবাহিত মেয়েদের মাসিক বন্ধ হওয়ার কারণ

ভূমিকা:


প্রকৃতির নিয়মে, ঋতুচক্র একজন নারীর জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতি মাসে জরায়ুর গর্ভাশয়, নতুন জীবনের আশায় নিজেকে সাজিয়ে তোলে। কিন্তু সেই আশা পূরণ না হলে, রক্তপাতের মাধ্যমে সেই প্রস্তুতি ধুয়ে যায়। কিন্তু, কখনো কখনো এই ঋতুচক্র থেমে যায়, বিশেষ করে অবিবাহিত মেয়েদের ক্ষেত্রে।

কেন ঘটে এই বিরল ঘটনা?


এই নিবন্ধে আমরা অবিবাহিত মেয়েদের মাসিক বন্ধ হওয়ার বিভিন্ন কারণ, রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা, এবং প্রতিরোধ সম্পর্কে আলোচনা করব।



স্বাভাবিক কারণ:


মেনোপজ: মেনোপজ হলো একজন নারীর জীবনের সেই সময় যখন তার ঋতুচক্র স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এটি সাধারণত 45 থেকে 55 বছর বয়সের মধ্যে ঘটে।

  • গর্ভধারণ: গর্ভধারণের সময় মাসিক বন্ধ থাকে।

  • স্তন্যদান: স্তন্যদানের সময়, কিছু নারীর মাসিক বন্ধ থাকে।

অস্বাভাবিক কারণ:


হরমোনের ভারসাম্যহীনতা: হরমোনের ভারসাম্যহীনতা বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন থাইরয়েড সমস্যা, পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS), এবং হাইপোথ্যালামাস-পিটুইটারি-অ্যাড্রেনাল (HPA) অ্যাক্সিস সমস্যা।

জরায়ুর সমস্যা: জরায়ুর ফাইব্রয়েড, জরায়ুর টিউমার, এবং অ্যাশারম্যান সিনড্রোমের মতো জরায়ুর সমস্যাগুলি মাসিক বন্ধ হওয়ার কারণ হতে পারে।

  • ওজন কমানো: দ্রুত ওজন কমানোর ফলে মাসিক বন্ধ হতে পারে।

  • অতিরিক্ত ব্যায়াম: অতিরিক্ত ব্যায়ামের ফলে মাসিক বন্ধ হতে পারে।

  • মানসিক চাপ: মানসিক চাপের ফলে মাসিক বন্ধ হতে পারে।

  • ঔষধ: কিছু ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে মাসিক বন্ধ হতে পারে।

মাসিক বন্ধ হলে কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন:


যদি আপনার বয়স 45 বছরের কম হয় এবং আপনার মাসিক 12 মাসের বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকে।

  • যদি আপনার মাসিক নিয়মিত অনিয়মিত হয়।
  • যদি আপনার মাসিকের সময় তীব্র ব্যথা হয়।
  • যদি আপনার মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত হয়।
  • যদি আপনার মাসিকের সময় জ্বর হয়।


রোগ নির্ণয়:


মাসিক বন্ধ হওয়ার কারণ নির্ণয়ের জন্য ডাক্তার আপনার শারীরিক পরীক্ষা করবেন এবং আপনার

  • চিকিৎসা ইতিহাস
  • পারিবারিক চিকিৎসা ইতিহাস
  • জীবনধারা

সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন। ডাক্তার নিম্নলিখিত পরীক্ষাগুলিও করতে পারেন:


রক্ত পরীক্ষা: হরমোনের মাত্রা, গর্ভধারণের পরীক্ষা, এবং থাইরয়েড ফাংশন পরীক্ষা সহ বিভিন্ন রক্ত পরীক্ষা মাসিক বন্ধ হওয়ার কারণ নির্ণয়ের জন্য করা যেতে পারে।

হরমোনের মাত্রা: ডাক্তার ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন, এবং ফলিকল-উত্তেজক হরমোন (FSH) এর মাত্রা পরীক্ষা করতে পারেন।

গর্ভধারণের পরীক্ষা: গর্ভধারণের পরীক্ষা গর্ভধারণকে কারণ হিসেবে বাদ দিতে পারে।

থাইরয়েড ফাংশন পরীক্ষা: থাইরয়েড সমস্যা মাসিক বন্ধ হওয়ার কারণ হতে পারে।

আল্ট্রাসাউন্ড:


আল্ট্রাসাউন্ড জরায়ু এবং ডিম্বাশয়ের ছবি তৈরি করতে শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করে। এটি জরায়ুর ফাইব্রয়েড, জরায়ুর টিউমার, এবং অ্যাশারম্যান সিনড্রোমের মতো জরায়ুর সমস্যাগুলি নির্ণয় করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।

এন্ডোমেট্রিয়াল বায়োপসি:


এন্ডোমেট্রিয়াল বায়োপসি হলো জরায়ুর অভ্যন্তরীণ আস্তরণ থেকে একটি ছোট্ট টিস্যু নমুনা সংগ্রহ করার একটি প্রক্রিয়া। এই নমুনাটি পরীক্ষা করে ডাক্তার জরায়ুর ক্যান্সার বা প্রাক-ক্যান্সারের কোন লক্ষণ আছে কিনা তা নির্ণয় করতে পারেন।

চিকিৎসা:

মাসিক বন্ধ হওয়ার চিকিৎসা এর কারণের উপর নির্ভর করে।

স্বাভাবিক কারণ: যদি মাসিক বন্ধ হওয়ার কারণ মেনোপজ বা গর্ভধারণ হয়, তাহলে কোন চিকিৎসার প্রয়োজন নেই।

অস্বাভাবিক কারণ: যদি মাসিক বন্ধ হওয়ার কারণ হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, জরায়ুর সমস্যা, ওজন কমানো, অতিরিক্ত ব্যায়াম, মানসিক চাপ, বা ঔষধ হয়, তাহলে এই কারণগুলির চিকিৎসা করা হবে।

উপসর্গের চিকিৎসা:


মাসিক বন্ধ হওয়ার সাথে জড়িত কিছু উপসর্গ, যেমন গরম আলো, রাতের ঘাম, এবং যোনির শুষ্কতা, চিকিৎসা করা যেতে পারে।

প্রতিরোধ:

মাসিক বন্ধ হওয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। তবে, স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ করে এর ঝুঁকি কমাতে পারেন।

স্বাস্থ্যকর জীবনধারা:

  • সুষম খাবার খাওয়া: প্রচুর ফল, শাকসবজি, এবং গোটা শস্য খান।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করা: সপ্তাহে বেশিরভাগ দিনে কমপক্ষে 30 মিনিট ব্যায়াম করুন।
  • স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা: আপনার উচ্চতা এবং ওজনের জন্য স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন।
  • ধূমপান ত্যাগ করা: ধূমপান মাসিক বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।


মানসিক চাপ কমানো: মানসিক চাপ মাসিক বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। যোগব্যায়াম, ধ্যান, এবং গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামের মতো কৌশলগুলি মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে।

পরামর্শ:

আপনার যদি মাসিক বন্ধ হওয়ার বিষয়ে কোন প্রশ্ন বা উদ্বেগ থাকে, তাহলে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন। ডাক্তার আপনার মাসিক বন্ধ হওয়ার কারণ নির্ণয় করতে এবং আপনার জন্য উপযুক্ত চিকিৎসা বিকল্পগুলি সুপারিশ করতে পারবেন।


উপসংহার:


মাসিক বন্ধ হওয়া একজন নারীর জীবনের একটি স্বাভাবিক অংশ। তবে, যদি আপনার মাসিক বন্ধ হওয়ার বিষয়ে কোন প্রশ্ন বা উদ্বেগ থাকে, তাহলে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন। ডাক্তার আপনার মাসিক বন্ধ হওয়ার কারণ নির্ণয় করতে এবং আপনার জন্য উপযুক্ত চিকিৎসা বিকল্পগুলি সুপারিশ করতে পারবেন।

Next Post Previous Post