সকালে খালি পেটে লেবু ও গরম পানি খাওয়ার উপকারিতা এক গ্লাস পানি এবং কয়েক ফোঁটা লেবুর রস, প্রতিদিন সকালে খালি পেটে যদি মিশিয়ে পান করা যায় তাহলে দেখবেন ডাক্তারের চেম্বারের ঠিকানা আপনি একেবারে ভুল গেছেন।
আসুন জেনে নেই সকালে লেবু পানি পানের উপকারিতা:- সম্পর্কে। চলুন জেনেনি খালি পেটে লেবু ও গরম পানি খেলে কি উপকার হয়।
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে লেবু পানি খেলে কি হয়?
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে উষ্ণ লেবু জল পান করলে আপনার শরীরের আয়রনের পরিমাণ বাড়তে সাহায্য করে। লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, যা শরীরে নন-হিম আয়রনের শোষণ বাড়াতে সাহায্য করে। আপনার যদি হেমোক্রোমাটোসিস রোগ থাকে, তাহলে প্রতিদিন খালি পেটে লেবুর পানি পান করা উচিৎ।
খালি পেটে লেবুর রস খেলে কি ক্ষতি হয়?
লেবুতে অ্যাসকরবিক অ্যাসিড থাকে। ফলে মানুষের ঘন ঘন প্রস্রাব হয় এবং কিডনির ওপর চাপ পড়ে এবং শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। খালি পেটে লেবু পানি পান করলেও হাড়ের ক্ষতি হতে পারে। খালি পেটে এই পানীয়টি পান করলে হাড়ের মধ্যে উপস্থিত তরল ঘন হয়ে যায়, যা হাড়কে দুর্বল করে এবং ফ্র্যাকচারের ঝুঁকি বাড়ায়।
গরম লেবু পানি খাওয়া কি ভালো?
2008 সালের একটি গবেষণায়, গবেষকরা দেখেছেন যে একটি গরম পানীয় পান করায় ঠান্ডা এবং ফ্লুর মতো রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। ঘুমানোর আগে উষ্ণ লেবু জল পান করা নাক আটকানো বা গলা ব্যথা সারাতে সাহায্য করতে পারে। লেবুতে ভিটামিন সি রয়েছে। 2017 এক গবেষনায় বলা হয়েছে যে ভিটামিন সি সর্দিরর মতো রোগকে কমিয়ে দিতে পারে।
পুষ্টির ঘাটতি দূর হয়
লেবু পানির ভেতরে যে কেবল ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মজুত থাকে তা নয়, সেই সঙ্গে উপস্থিত থাকে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম এবং আরও কত কী, যা দেহের ভেতরে পুষ্টির ঘাটতি দূর করে শরীরকে শক্তপোক্ত রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
হজম শক্তি বাড়ায়
লেবু পানিতে যে এসিড রয়েছে তা খাবার হজম করতে সাহায্য করে। এতে আছে সাইট্রাস ফ্লাভোনইডস যা পাকস্থলীতে খাবারকে ভেঙে সহজেই হজম করে। বয়সের সাথে সাথে হজম ক্ষমতা কমে যায়। এছাড়াও পানির সাথে কয়েক টুকরা লেবু বা কুচি করা লেবুর ছোলা মিশিয়ে খেলেও আপনি পেকটিনের গুণ পাবেন। পেকটিন হলো এক ধরনের ফাইবার যা ছোলা থেকে পাওয়া যায়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, ফাইবার হজম শক্তি বাড়াতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তাই লেবু পানি না খেলেও টুকরা লেবু পানিতে দিয়ে বা লেবুর ছোলা পানিতে দিয়ে খেলে উপকার পাবেন।
শরীর হাইড্রেট রাখবে
লেবুর গুণ আপনাকে সরাসরি হাইড্রেট রাখবে না। তবে লেবুর স্বাদ এ বিষয়ে পালন করবে এক অনন্য ভূমিকা। শরীরে পানির পারফেক্ট ব্যালেন্স বজায় রাখতে সারাদিনে আপনার প্রচুর পরিমাণ পানি পান করা দরকার। পানিতে কোনো স্বাদ নেই বলেই হয়তবা বারবার খাবার আগ্রহটা কাজ করে না। সেক্ষেত্রে লেবু পানি পানে স্বাদও পাবেন এবং হাইড্রেটও থাকবেন।
দেহের ভেতরে পি এইচ লেভেল ঠিক থাকে
ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে লেবু পানি খেলে দেহের ভেতরে পি এইচ লেভেলের ভারসাম্য ঠিক থাকে। ফলে ভেতর এবং বাইরে থেকে শরীর এতটাই চাঙ্গা হয়ে ওঠে যে দেহের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে সময় লাগে না।
ওজন কমাতে সাহায্য করে
আপনি যদি ডায়েট করার চিন্তা-ভাবনা করতে থাকেন, তাহলে লেবু পানিকে আপনার সেরা বন্ধু হিসেবে বেছে নিতে হবে। লেবুতে আছে পলিফেনলস যা ক্ষুধা নিবারণে সাহায্য করে। এছাড়া খাওয়ার আগে পানি পান করলেও ক্ষুধা কিছুটা কম লাগে। সকালে উঠে যদি আপনার কমলার জুস পানের অভ্যাস থাকে, তাহলে অভ্যাসটি বদলে লেবু পানি পানের চেষ্টা করুন। কারণ কমলার জুসে ক্যালরি থাকে যাতে আপনার ওজন বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ৮-১২ আউন্স নরমাল বা ঠান্ডা পানিতে পুরো একটি লেবুর রস মিশিয়ে নিন। তবে ওজন কমানোর জন্য ঠান্ডা লেবুর পানিই বেশি কার্যকরী।
টিবি রোগের চিকিৎসায় কাজে আসে
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্রে এমনটা দাবি করা হয়েছে, টিবি রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত ওষুধের সঙ্গে লেবুর মতো ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল যদি খাওয়া যায়, তাহলে ওষুধের কর্মক্ষমতা মারাত্মক বৃদ্ধি পায়। ফলে রোগের প্রকোপ কমতে সময়ই লাগে না।
কিডনির পাথর প্রতিরোধ করে
লেবুতে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড কিডনিতে পাথর জমা প্রতিরোধ করে। এই সাইট্রিক অ্যাসিড কিডনিতে পাথর প্রতিরোধের পাশাপাশি জমে থাকা পাথর বের করতেও সাহায্য করে।
ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ে
হাজারো বিউটি প্রডাক্ট যা করে উঠতে পারেনি, তা লেবু পানি নিমেষে করে ফেলতে পারে। আসলে এই পানীয়তে উপস্থিত বেশ কিছু উপাদান ত্বকের হারিয়ে যাওয়া ঔজ্জ্বল্য ফিরিয়ে আনে। সেইসঙ্গে ত্বকের বয়স কমানোর পাশাপাশি ব্ল্যাক হেডস এবং বলিরেখা কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, গরমকালে ত্বককে ঠাণ্ডা এবং ঘামমুক্ত রাখতে লেবুর পানি দিয়ে বারে বারে মুখটা ধুতে পারেন, দেখবেন উপকার পাবেন।
লিভারের কার্যক্রম সচল রাখে
লিভার আপনার শরীরে ফিল্টার হিসেবে কাজ করে। লেবুর সাইট্রাস ফ্লাভোনইডস লিভার থেকে বর্জ্য ফেলে দিতে ও লিভারের ফ্যাট কমাতে সাহায্য করে। তাই লিভারকে সুস্থ রাখার জন্য লেবু পানি খুব উপকারী।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে
সাধারণত পটাশিয়ামের কথা বললেই প্রথমে কলা এবং বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি ও ফলমূলের কথা মাথায় চলে আসে। কিন্তু লেবু থেকেও যথেষ্ট পরিমাণ পটাশিয়াম পাওয়া সম্ভব। পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, মাংসপেশীর কর্মক্ষমতা বাড়ায় ও হার্টবিট নিয়ন্ত্রণ করে। তাই আপনার শরীরে পটাশিয়ামের চাহিদা পূরণ হওয়া দরকার। যেহেতু লেবুতে পটাশিয়াম রয়েছে তাই দিনের শুরুতে লেবু পানি পান করে নিলে আপনার শরীরে পটাশিয়ামের চাহিদার কিছুটা পূরণ করতে পারবেন।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা সমাধানেও দারুণ কাজ করে লেবু পানি। সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে হালকা কুসুম গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে পান করে নিন। শুধু লেবুর রস গরম পানি দিয়ে পান করতে খারাপ লাগলে এর সাথে মিশিয়ে নিতে পারেন মধু ও সামান্য লবণ। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার এ ফর্মুলাটি অভাবনীয়ভাবে কাজ করে। তাই সকালে উঠে লেবু পানি গলাধঃকরণ করলে আপনার পেট পরিষ্কার হওয়ার ব্যাপারটা একেবারেই নিশ্চিত।
উপসংহারঃ
আমরা উপরের লেখা গুলো পরে অবসেসে বুঝতে পারলাম যে, সকালে খালি পেটে লবু ও গরম পানি খাওয়া আমাদের শরিরের জন্য অনেক উপকারি। যদি আপনাদের কোন প্রকার উপকারে আসে তাহলে অবশ্যই আমাদের সাথে থাকবেন এবং লাইক ও শেয়ার করতে ভুলবেন না।