টেন্ডার বাণিজ্য ও একাধিক নারীতে আসক্ত ছিলেন, বেরিয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য
জাতীয় পর্যায়ে: ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা সদ্য ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত বিশ্বস্ত ও ঘনিষ্ঠ ছিলেন। মুনিরুল ইসলাম। তিনি একই এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। এ কারণে গত ১৫ বছর ধরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর গুডবুকে রয়েছেন এই প্রভাবশালী পুলিশ কর্মকর্তা।
সরকারের অনুরোধে তিনি সব ধরনের কাজ করছিলেন। ফলে একের পর এক পদোন্নতি পেয়ে মনিরুল পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ পরিদর্শক হন। এর আগে তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সিটিটিসি ও ডিবির প্রধান ছিলেন। চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে প্রধান কনস্টেবল (আইজিপি) হওয়ার খসড়া তালিকায় ছিলেন গোপালগঞ্জের বাসিন্দা মুনিরুল।
তা না হলে আগামী বছর পুলিশ প্রধান হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে চিন্তিত ছিলেন তিনি। কিন্তু ৫ আগস্ট শিক্ষার্থীদের সহিংস গণআন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর তাকে বন্ধু হিসেবে চিহ্নিত করে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। এর মধ্য দিয়ে তার আইজিপি হওয়ার স্বপ্ন ভেস্তে গেল বলে খোদ পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এদিকে মনিরুলের বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলায় সামরিক নাটক সাজানোর অভিযোগও পুরনো।
এ নিয়ে নির্যাতিতার পরিবারসহ বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। অন্যদিকে, তাকে অবশ্যই প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হতে হবে। মুনিরুল ইসলাম ঘুষ, নিয়োগ, টেন্ডারবাজি, ব্যবসায় গ্রেফতার, কেনাকাটা ও নারীদের প্রতারণার মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। ক্ষমতার শীর্ষ থেকে কীভাবে দুর্নীতি ও অপরাধকে শিল্পে পরিণত করা যায় তার একটি প্রধান উদাহরণ এই প্রভাবশালী সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা। স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পুলিশের বিশেষ শাখার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. দীর্ঘদিন ধরে মনিরুল ইসলামের পরিবার ও ঘনিষ্ঠজনদের একত্রিত করে সরকারি চাকরির সুবিধার জন্য এসব অপকর্ম করে আসছে সে।
তিনি তার শ্যালক শাহীনের মাধ্যমে ঘুষের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ অর্জন করে দেশে-বিদেশে বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেছিলেন। বহেড়া থানার এসপি শফিকুলের কর্মকাণ্ডের মূল হোতা মনিরুল ইসলাম। ঘুষের টাকা বাজারের ব্যাগে ভরে মনিরুলের বাড়িতে যায় বলে একাধিক সূত্রে খবর পাওয়া গেছে। এমনকি ঢাকায় তার দুজন স্থায়ী প্রহরীও ছিল। তারা গাড়ি, একটি বাড়ি এবং অবৈধ সুবিধার জন্য অর্থও পেয়েছে। তিনি অভিভাবকদের বাড়িতে নিয়মিত পার্টির আয়োজন করতেন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনের পাশাপাশি গত ১৬ বছর ধরে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের দমনের নামে বেপরোয়া আচরণ করে আসছেন মনিরোল।
সরকারের ঘনিষ্ঠ হওয়ার জন্য এসব অপরাধে জড়িয়ে পড়েন তিনি। আমি তার কপাল খুললাম।
একজন মহান পুলিশ অফিসার হয়ে উঠুন। ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বিপুল অবৈধ সম্পদ পুঞ্জীভূত করা। আত্মীয়স্বজনের নামে গড়েছেন হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ। মনিরুলের নামে দেশ-বিদেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। এদিকে মনিরুল ইসলামের অবৈধ সম্পদ ও অন্যান্য অপরাধ তদন্ত করছে সরকারের একাধিক সংস্থা। মনিরুল ঢাকা সিটি পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
পরে তিনি এই ইউনিটের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পুলিশের বিশেষ শাখার সর্বশেষ প্রধান ছিলেন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মুনিরুল ইসলাম। সেখান থেকে সরকার তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায়। শিক্ষার্থীদের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের শেষ দিকে মনিরুল তার পুরো সময় পুলিশ সদর দপ্তর ও ডিএমপির কন্ট্রোল রুমে কাটান। ৫ আগস্ট পুলিশ সদর দফতরে অবস্থানকালে, জনতার হামলার সময় তিনি অন্যান্য ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে একটি সামরিক হেলিকপ্টারে ঢাকা ক্যাম্পে আশ্রয় নেন, কিন্তু বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন। সূত্র জানায়, মনিরের নিজস্ব ইউনিয়ন ছিল। যে ইউনিয়নে সাবেক নগর গোয়েন্দা প্রধান হারুন উর রশিদ, মুনির, সারোয়ার নজরুলসহ অনেক কর্মকর্তা ছিলেন। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পুলিশ পোস্ট, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ঘুষ আদায়, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, গ্রেফতার করা হয়।
মনোরোলের দুজন স্থায়ী প্রহরী ছিল। তাদের একজন বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা। আমি সম্প্রতি একজন নির্মাতাকে বিয়ে করেছি। অভিনেত্রীকে বেইলি রোডে একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট দিয়েছেন মনিরুল। যেখানে নিয়মিত ছুটি কাটাতেন মনিরল। অন্যজন হলেন একজন বিখ্যাত বিজ্ঞাপন নির্মাতা, টেলিভিশন ও বর্তমান সময়ের চলচ্চিত্র পরিচালকের সাবেক স্ত্রী ও অভিনেত্রী। এসবি প্রধান মনিরুল কয়েক কোটি টাকা খরচ করে তার ব্যক্তিগত অফিস ও সম্মেলন কক্ষ সাজিয়েছেন। সূত্র জানায়, ঢাকায় এক বিদেশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিএনপি নেতা ও তার পরিবারের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা চুরি করেছেন ধাবোত পুলিশ কমিশনার মুনিরুল ইসলাম। বিদেশে থাকাকালীন এই টাকা ডলারে রূপান্তরিত হওয়ার মুহূর্তের ভিডিও ফুটেজ রয়েছে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থার কাছে। বিভিন্ন মামলায় সন্ত্রাসীদের ফাঁসানোর নামে ইউনিয়নের মাধ্যমে ব্যবসায়ী ও বিরোধীদলীয় নেতাদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি করে আসছে। মনিরুল সিন্ডিকেট বিদেশে গৃহীত ডলার তহবিল বাণিজ্য করতে ব্যবহৃত হয়।
অন্য একটি সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন দমনের খরচ মেটাতে গত ৪ আগস্ট সকালে সাউথহপ্পান থেকে প্রায় ২৫ কোটি রুপি নিয়ে আসেন এই মনিরুল। পুরো টাকাই এসবি অফিসে তার ব্যক্তিগত কক্ষে রাখা ছিল। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর মনিরুল আর পদে ছিলেন না। এসবি সূত্রে জানা গেছে, ওই সময় এসবি কর্মীদের সাহায্য করতেন বলে পরিচিত দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পুরো টাকা গায়েব করে দেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমনের প্রণোদনা হিসেবে গত ৪ আগস্ট এসবির বিকল্প সদস্যদের মধ্যে বিতরণ করতে গণভবন থেকে ২৫ কোটি টাকা নিয়ে আসেন মনিরুল। এসবির এসএস (অর্থ) ও এসবি চেয়ারম্যানের স্টাফ অফিসার পুরো বিষয়টি জানতেন। তারা এসবির অতিরিক্ত ডিআইজি (প্রশাসন ও অর্থ) কে বিষয়টি জানালে তিনজনই সব টাকা আত্মসাৎ করার সিদ্ধান্ত নেন।
সরকারের পতনের পর গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্রের অজুহাতে এসব তহবিল আত্মসাতের অজুহাতে এসবি চেয়ারম্যানের কার্যালয়, বেইলি রোডে তার বাড়ি ও সিটি এসবির ডিআইজির কার্যালয় সিলগালা করে দেন তিনজন। 6 আগস্ট, এসবি অফিসের সমস্ত সিসিটিভি এবং ডিশ লাইন কেটে দেয়। ৬ আগস্ট থেকে ১২ আগস্টের মধ্যে এসবি চেয়ারম্যান মনিরুলের অফিসে রাখা ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন তিনজন। জঙ্গি অভিযান নাটকের মাধ্যমে মনিরুলের নাম ছড়িয়ে পড়ে পুলিশ র্যাঙ্কের মধ্যে। এ সময় তার বস ও বিশেষ সহকারী ছিলেন সাবেক চিফ কাউন্টার টেরোরিজম অফিসার (সিটিটিসি) এবং মেরিল্যান্ডের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার। আসাদুজ্জামান পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের মহাপরিচালক হিসেবে কর্মরত একজন কর্মকর্তা। মনিরুলের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থানার বাহারা গ্রামে। মনেরলের বড় ছেলে ইংল্যান্ডে পড়াশোনা করছে এবং ছোট মেয়ে কানাডায়। তার স্ত্রী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের একটিতে যুগ্ম সচিব হিসেবে কর্মরত।
মনিরুল ইসলামের জামাতা ইজহার শাহীনের আঙুল : সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলামের জামাতা ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সায়লা ফারজানা শিওলির জামাতা রাজা আলম শাহীন তার প্রভাব খাটিয়ে বিপুল সম্পদ ও সম্পত্তি গড়ে তুলেছেন। ভগ্নিপতি জামাই সূত্র জানায়, এসব সম্পদ মুনিরুল ও তার স্ত্রীর।
ঢাকায় নিজের নামে অন্তত ৭টি অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন শাহীন। স্ত্রীর নামে বাড়িটি কিনেছেন তিনি। 15 বছর ধরে গ্রামে থাকা একটি টিনের ঘর এখন বিলাসবহুল ডুপ্লেক্সে রূপান্তরিত হয়েছে। ভাই এসপি শফিকের অপকর্ম: গাজীপুরের সাবেক পুলিশ সুপার কাজী শফিক আলমের বিরুদ্ধে জমি দখল, বালু ব্যবসা, ডাক ব্যবসা, মাদক ব্যবসায়ীদের ফাঁস, ওসির কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ ও প্রতারণাসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। তিনি যখন সিরিয়ান ছিলেন, তখন আশেপাশের গলিতে মাদক ছড়িয়ে পড়ে। তিনি দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারে আসক্ত ছিলেন। একদিকে বারি গোপালগঞ্জ অন্যদিকে সাবেক এসবি প্রধান (অতিরিক্ত আইজিপি) ভাই মুনিরুল ইসলাম। কে তাকে আঘাত করে? এই কারণেই তিনি অসীম ক্ষমতার অহংকারকারী কাউকে পাত্তা দেননি। সম্প্রতি তাকে ময়মনসিংহের ডিআইজি অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছে।